পড়ুন হোলির অজানা কিছু মাহাত্ম্যকথা

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ১৭, ২০২১

নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান। তবু বিবিধের মাঝে দোলের মাহাত্ম্য কিন্তু মিলনে। দোল বা হোলি নামের মাহাত্ম্যের সাথে আবার অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত এক যুগাবতারের নাম। শ্রীকৃষ্ণের হাত ধরেই ভারতভূমিতে হোলির সূত্রপাত বলে মেনে নেয় লোকগাথা। শ্রীকৃষ্ণকে কেন্দ্র করেই হোলির সূত্রপাত, একথা মানলেও মহাকাব্য থেকে লোকগাথায় দোল শুরুর কারণে বৈচিত্র্যের অভাব নেই। 

কথিত আছে, বসন্তের প্রথম পূর্ণিমায় ‘কেশি’ নামে এক অত্যাচারী অসুরকে বধ করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। বসন্ত পূর্ণিমায় আসুরিক শক্তির বিনাশের আনন্দে শ্রীকৃষ্ণ দানবের রক্ত ছিটিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন। সেই আনন্দে সামিল হন ব্রজবাসীও। তার হাত ধরেই সূচনা হয় হোলি উৎসবের। আবার আর এক মতে, ‘অরিষ্টাসুর’ নামের এক অসুর বধের আনন্দেই নাকি শ্রীকৃষ্ণের সাথে মৃত দৈত্যের রক্ত নিয়ে উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিলেন ব্রজধামের বাসিন্দারা। সেই রক্তরাঙ্গা রঙের উৎসব থেকেই প্রবর্তন হয় দোল বা হোলি মহোৎসবের।

আরো পড়ুন :  জাপানিজ ডায়েট চার্ট, আয়ু বাড়ান খাদ্যাভ্যাসে!

কথিত আছে, একবার বৃন্দাবনে রাধা তাঁর সখিদের সাথে খেলায় নিমগ্ন হয়েছিলেন। সেইসময় রাধার বস্ত্র তাঁর অঙ্গ থেকে খসে পড়ে যায়। ফলে ভারী বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয় তাঁকে। ঘটনাচক্রে সেই সময় ওখানে উপস্থিত ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। রাধার লাজ অক্ষুণ্ণ রাখতে কৃষ্ণের মাথায় একটা দারুণ বুদ্ধি খেলে যায়। কোথা থেকে রঙ যোগাড় করে শ্রীকৃষ্ণ রাধা ও তাঁর সখীদের সঙ্গে হঠাৎ রঙের খেলায় মেতে উঠেন। খেলার ছলে তিনি রঙের আচ্ছাদনে ঢেকে দেন রাধার শরীরের অনাবৃত অংশ। মান রক্ষা হয় রাধার। তারপর থেকেই ব্রজধামে শুরু হয় হোলি উৎসব। এমন নানা কথিত কাহিনি এখনও ঘুরে বেড়ায় মানুষের মুখে মুখে।

রাধা-কৃষ্ণের হাত ধরে দোল উৎসব প্রচলনের আরও অনেক বহুমাত্রিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। সেই ব্যাখ্যায় কোথাও মেলে রাধার অবর্ণনীয় রূপের প্রতি ঘনশ্যামের ঈর্ষার গন্ধ। রাধার কোমলকান্তি শরীরের মাখনের মত রং নিয়ে নাকি মনে মনে ভারী হিংসা করতেন কৃষ্ণঘন শ্যামসুন্দর। তাই রাধাকে কুৎসিত দেখাতে একবার তিনি নানা রঙে ব্রজগোপিনীদের ভূত করে তোলার ফন্দি আঁটেন।

আরো পড়ুন :  বাচ্চার ওজন বাড়ানোর জন্য নিরাপদ ২টি খাবার!

বসন্ত পূর্ণিমার দিন রঙের ঝর্ণায় সবান্ধবে কৃষ্ণ রাঙিয়ে তোলেন রাধাসহ বাকি গোপিনীদের। কিন্তু কি আশ্চর্য! বিভিন্ন রঙের মিশেলে রাধার রূপের ঘনঘটা তো কমলই না। উল্টে তা যেন আরও শতগুণে খোলতাই হয়ে উঠল। রাধার সেই অপরূপ মনোগ্রাহী রূপ ফিরে ফিরে দেখার আশায় তারপর থেকে প্রতিবছর ব্রজভূমিতে রং খেলার উৎসবে মেতে উঠলেন ব্রজের দুলাল। প্রচলিত হল হোলি।

দোল প্রবর্তনের আরেক তত্ত্ব! একবার বৃন্দাবনের কুঞ্জবনে দেখা হয় রাধা কৃষ্ণের। কৃষ্ণের সাথে কথা বলতে বলতে রাধার খেয়াল হয়, তাঁর গায়ে ফুলের পাপড়ি ঝরে ঝরে পড়ছে। অথচ মাথার উপরে তো কোনও ফুলের গাছ নেই! তাহলে এমন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটছে কী করে?

শ্রীকৃষ্ণ তখন স্মিত হেসে রাধাকে জানান, দেবতারা নাকি স্বর্গে রঙের উৎসব পালন করছেন। সেকথা শুনে শ্রীরাধাও রঙ খেলতে শ্রীকৃষ্ণের কাছে আবদার জানালেন। রাধার আবদার মেটাতে ফাল্গুনি পূর্ণিমার দিনেই আয়োজন করা হল দোলের। সেখান থেকে মহাসমারোহে দোল পালিত হতে লাগল ব্রজের মাটিতে।

আবার ব্রজভূমিতে এমন গল্পও শোনা যায় যে রাধিকার গায়ের রং ছিল ফর্সা। অথচ তাঁর শ্যামবর্ণ। এতে প্রবল আপত্তি ছিল কৃষ্ণের। ছোট থেকেই এ নিয়ে তিনি রাধাকে হিংসা করতেন। একদিন মা যশোদার কাছে গিয়ে মনের ক্ষোভ খুলে বলেই ফেললেন কিশোর কৃষ্ণ। যশোদা ছেলের সেই ক্ষোভের কথা শুনে হেসে একটা উপায় বার করে দিলেন।

আরো পড়ুন :  গর্ভবতী মহিলারা যেসব খাবার খাবেন না!

শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, বেশ এক কাজ কর, তুমি বরং রাধার গায়ের রং যেমন হলে খুশি হবে, সেই রং রাধার গায়ে দিয়ে দাও। কৃষ্ণের খুব পছন্দ হল মায়ের বলা উপায়। খুশি হয়ে তখনই গিয়ে রাধাকে রঙে রঙে ভরিয়ে তুললেন কৃষ্ণ। ঠিক নিজের মত করে। আর সেই থেকেই শুরু হল রংয়ের উৎসব হোলি।

রাধা-কৃষ্ণ নামের সঙ্গে হোলির দেহতাত্ত্বিকতার সম্পর্কের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে। একবার প্রেমবাণে বিদ্ধ রাধা দয়িত শ্রীকৃষ্ণের কাছে তাঁর সর্বস্বটুকু দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। ফাল্গুনি পূর্ণিমার রাতে প্রেমিকার সাথে নিবিড় রতিক্রিয়ায় মত্ত হয়ে ওঠেন শ্রীকৃষ্ণ। সারারাত্রি ধরে তিনি নানাবিধ কামকলার প্রয়োগে রাধিকার সারা শরীরে ছড়িয়ে দিলেন প্রেমানুরাগের চিহ্ন। শ্রীকৃষ্ণের সাথে দীর্ঘ রতিক্রিয়া শেষে শ্রীরাধিকা যখন উঠে দাঁড়ান তখন তাঁর শরীর জুড়ে শ্রীকৃষ্ণের ভালবাসার চিহ্ন স্পষ্ট। কিন্তু ওই অবস্থায় তো রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না। বাড়িতেও কেউ দেখলে বিপদ।

রাধাকে সবরকম লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে ফন্দি বার করলেন শ্রীকৃষ্ণ। দুষ্টবুদ্ধিতে সিদ্ধহস্ত শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধিকার সারা দেহ রঙে রঙে ভরিয়ে দিলেন। একইসাথে সমগ্র ব্রজধামে রঙ খেলার ঘোষণা করে দিলেন তিনি। ব্রজবাসীর গাঢ় রঙের আড়ালে হারিয়ে গেল শ্রীরাধিকার দেহ জুড়ে শ্রীকৃষ্ণের ভালবাসার চিহ্ন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, এভাবেই নাকি শুরু হয় হোলি উৎসব।

আরো পড়ুন : দ্রুত ওজন কমাতে ৭দিনের ডিমের জাদুকরী ডায়েট প্লান!

এমন নানা মত, নানা কাহিনি ছড়িয়ে আছে ব্রজভূমি তো বটেই, এমনকি গোটা দেশ জুড়ে। রাধাকৃষ্ণের নানা কাহিনি আজও মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। অনেকটা লোকগাথায় পরিণত হয়েছে এসব কাহিনি। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল সেটা নিয়েও আছে নানান বিতর্ক। 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment