পর্ন ছবি বাস্তব জীবনে কতটা প্রভাব ফেলছে?

  • ফারজানা আক্তার 
  • অক্টোবর ৯, ২০১৮

পর্ন ছবির প্রতি আসক্তির কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। বহু বছর ধরেই এর অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের সমাজে। আগে এর প্রতি ছেলেদের আসক্তি বেশি থাকলেও, আজকাল মেয়েরাও এর প্রতি আসক্ত। পর্ন দেখা ভালো কি খারাপ সেই বিষয়ে পরে আসি। আমাদের সমাজে কেউ পর্ন দেখে শুনলেই অন্যরা বাঁকা চোখে তাকায়। 

আমরা ধরেই নিয়েছি যে পর্ন দেখে সে চরিত্রহীন পুরুষ। চরিত্রবান পুরুষ কখনো পর্ন দেখে না। অপ্রিয় হলেও সত্যি একটা কথা হলো, ডিজিটাল যুগে পর্ন দেখা আর না দেখা দিয়ে যদি আমরা চরিত্রবান পুরুষ বিচার করি তাহলে এই সমাজে কয়জন চরিত্রবান পুরুষ পাওয়া যাবে সেই বিষয়ে আমি সন্দিহান। প্রযুক্তি যত বেশি সহজলভ্য হচ্ছে , নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের মোহ ততই কাজ করছে। 

পশ্চিমা দেশগুলোতে পর্ণ ছবিকে "ভালো" আখ্যা দেওয়া হয়েছে। জাপান ও স্কেনডেনেভিয়ান দেশগুলোতে যেখানে মানুষ পর্ণগ্রাফি দেখার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করে সেসব দেশে পুরুষ কর্তৃক নারীদের যৌন নির্যাতন করবার হার অপেক্ষাকৃ্ত কম। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো- ডেনমার্ক। ১৯৬৯ সালে ডেনমার্ক পর্ণগ্রাফির উপর থেকে সকল বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। (সূত্র : গুগল )

তার পর ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৫ সালের উপাত্ত থেকে দেখা যায়- যৌন সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা লাখে ৩০ থেকে কমে লাখে ৫ এ নেমে আসে। একই ধরনের পজেটিভ ফল দেখতে পাওয়া যায় ধর্ষণের ক্ষেত্রে। কানাডার মন্ট্রিল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সাইমন লুইস তার দু বছরের এক গবেষনার আলোকে বলেছেন- ”All men watch porn, and it is not bad for them”  (সূত্র : গুগল )

সেই সাথে পর্ণ ছবি দেখার ফলে কেউ অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠবে এই ধরণার সাথেও অধ্যাপক সাইমন দ্বিমত প্রকাশ করে বলেছেন, " The majority watches X-rated movies to satisfy a “fringe fantasy” and it would be unfair to extrapolate from that that it leads to criminal behavior."  (সূত্র : গুগল )

মানুষ পর্ণ ছবি দেখলে তা তার ব্যক্তি জীবণেও চর্চা করবে এ ধারনাকেও তিনি বাতিল বিবেচনা করে বলেন, ”Men make a distinction between their real lives and sexual fantasies”.  (সূত্র : গুগল )

প্রফেসর সাইমন লুইসের শেষের কথাটার সাথে আমি ঠিক একমত হতে পারলাম না। এই যে আমি আজকে পর্ন নিয়ে ইন্টারনেটে এত ঘাটাঘাটি করলাম তার নিশ্চয় একটা কারণ আছে। আমি বেশ কয়েকজন নারীর মুখে তাদের বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতার কথা শুনলাম। তাদের মধ্যে একজনের বিবাহিত বয়স ১২বছর এবং দুই বাচ্চার মা। 

১২বছর পর এসে তিনি তার যৌন জীবন নিয়ে মুখ খুললেন। এই কয়েকজন নারীর মধ্যে একজনের বিবাহিত জীবনের বয়স মাত্র ৩মাস এবং বয়সের তুলনায় তাকে মহিলা না বলে কিশোরী বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, 'স্বামীর সাথে সহবাসের সময় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। তিনি কি কি নিয়ম বলেন আর ভিডিও দেখেন আমি সেসব সহ্য করতে পারি না।'

আমি মাত্র কয়জনের কথা জানি এবং তার মধ্যে থেকে মাত্র দুইজনের কথা উল্লেখ করলাম। একজনের বিবাহিত জীবন এক যুগ, অন্যজনের মাত্র শুরু। তাদের সবার স্বামী পর্নে আসক্ত এবং শুধু আসক্ত হয়েই থেমে থাকে নি। সেটা নিজের বাস্তব জীবনে এপ্লাই করতে চাচ্ছে। 

পর্ন মুভিতে যারা কাজ করে সেটা তাদের প্রফেশন। সেখানে প্রেম, ভালোবাসা কিছু থাকে না। সেখানে শুধু পেশাদারিত্ব থাকে। আর, বাস্তব জীবনে স্বামী - স্ত্রীর মধ্যে যখন শারীরিক সম্পর্ক হয় সেখানে প্রেম -ভালোবাসা, মায়া - আকর্ষণ সব থাকে। দুইটাকে একসাথে মিলিয়ে ফেললে তো বিপদ। পর্নের ফ্যান্টাসিতে আটকিয়ে গেলে সেটা সমাজ এবং পরিবার সাথে নিজের ব্যক্তি জীবন সবকিছুর জন্য খারাপ। মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুই কারো জন্য কখনো ভালো কিছু বয়ে আনে না। সবার জীবন সুন্দর এবং সুখময় হোক।  

Leave a Comment