বেড়ে চলছে নারী নির্যাতন ও সহিংসতা

  • মীর মারুফ তাসিন
  • মে ২৩, ২০১৯

কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর যখন অন্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হুমকি বা বল প্রয়োগ করে থাকে তাকে নির্যাতন বলে। নারী নির্যাতন বলতে বুঝি  যে কোনো বয়সের নারীকে নিগ্রহ,অত্যাচার ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা বুঝায়। পুরুষের মাধ্যমে নারীদেরকে কোনো প্রকার কস্ট দেয়াকে বুঝায়। নারীর যেকোনো অধিকার খর্ব বা হরণ করা এবং কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেকোনো বিষয় চাপিয়ে দেয়া বা কোনো ব্যক্তির ইচ্ছানুসারে কাজ করতে বাধ্য করা নারী নির্যাতন অন্তহত। সার্বজনীন নারী অধিকারের সুপষ্ট লঙ্ঘনমূলক অপরাধ নারী নির্যাতন। 

ধারণাগতভাবে এটি আবার নারীর প্রতি সহিংসতা নিপীড়ন এবং নারীর সাথে অপব্যবহার বুঝায়। নারী নির্যাতন বিভিন্ন ধরণের ও প্রকৃতির হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি হলো নারীদেরকে আঘাত করা বা অপব্যবহার,যৌতুকের জন্য মানসিক চাপ, মানসিক নিপীড়ন,যৌন নিপীড়ন,ধর্ষণ,বাল্যবিবাহ বিদেশে পাচার। ধর্ষণ করতে গিয়ে জখম বা মৃত্যু ঘটানো ইত্যাদি অপরাধের প্রকাশ পায়।

সম্প্রতি আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নারী নির্যাতনের খবর পেয়ে থাকি। সকল ধর্মের নারীর প্রতি যে কোন ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে। নারীরা যেন সহিংসতার স্বীকার না হন তা নিশ্চিত করার জন্য ধর্মসমূহে বিভিন্ন বিধান বিভিন্ন ব্যবস্থা আছে। অথচ ধর্মের নামে নারী নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হন নারীরা। এর মূলে রয়েছে পুরুষের নারীকে বশীভূত রাখার অসুস্থ মানসিকতা এবং কখনো ধর্মের অপব্যবহার ও অপব্যাখা। বর্তমানে বিশ্বের নারীরা সহিংসতার শিকার হতে হচ্ছে। খুন,গুম,অপহরণ,উক্ত্যতকরণ,মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন ধর্ষণ প্রভূতি নারীদের জীবনযাত্রা বিভীর্ষির্কাপূর্ণ করে তুলেছে। বিভিন্ন ধর্মে নারীদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। ধর্মীয়ভাবে তাদের প্রতি বৈর্ষম্য ও নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই।

নারীদের প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা দিনে দিনে বেড়ে চলছে। আমরা দেখেছি কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় তনু হত্যা  বিচার আজ পর্যন্ত হয় নাই। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা ঘটনার মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকসহ জড়িতদের ধরে আইনের আওতা আনা হয়েছে। তারপরও নারী নির্যাতন বেড়ে চলছে। দু:খজনক হলেও সত্য প্রতিবছর নারী সংহিসতার শিকার হয়ে বহু নারী মৃত্যুবরণ করছেন । কারণ তারা কেউ কাছে বলতে পারে না। তাদেরকে বলতে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। নির্যাতিত হওয়া পরও থাকতে হয় নানামুখী চাপে।

নারী নির্যাতন ভয়াবহ চিত্র। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারো (বিবিএস) মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ তথ্যনুযায়ী ,১২হাজার ৫৩০ জন নারী নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি জরিপ চালিয়ে নারী নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন নারী স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন ৬৫ শতাংশ,৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন,৮২ শতাংশ মানসিক শতাংশ। ৫৩ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

নারী নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে প্রচলিত আইন দ্বারা আইনের প্রয়োগ করতে হবে। বিশ্বে নারী অধিকার আদায়ে অনেক সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। যে নারীরা মুখ খুলে কথা বলতে ভয় পায় তাদেরকে সাহস দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নারীর প্রতি সংহিংসতা রোধের জন্য আইন ছাড়াও আমাদের প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। দৃষ্টিভঙ্গির   মাধ্যমে নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধ করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই , নারীর নির্যাতন ও সহিংসতা জন্য নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের  নিজ অধিকারে আদায় জন্য নিজেদের কথা বলতে হবে। নারী নির্যাতনকারী যে হউক না কেনো তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নারীদের সচেতন হতে হবে প্রকৃত অধিকার প্রসঙ্গে। তাদের হতে হবে শিক্ষা ও চিন্তায়। তাই নারীদেরকে যখনই মানুষ হিসাবে দেখা হলে তখনই নারী নির্যাতন সহিংসতা কমে আসবে ।

লেখক:মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউর্নিভাসিটি
শিক্ষার্থী জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ।

Leave a Comment