বাবা মায়ের ঝগড়া এবং বাচ্চাদের অশান্তি

  • রোজী আরেফিন
  • জুন ২৭, ২০১৯

নিউজ ফিডে নিউজটা দেখেই চোখ আটকে গেলো আমার। একটা বাচ্চা ছেলে থানায় এসে পুলিশের সাহায্য চাচ্ছে তার বাবা মায়ের ঝগড়াঝাটি থামানোর জন্য। ছেলেটার কান্নামাখা মুখ দেখে কেমন জানি আমার বুকের ভেতরটা হু হু করে মোচড়াতে লাগলো খুব।

এত ছোট একটা বাচ্চা কি বুঝে থানা পুলিশ নিয়ে! অথচ এই বয়সেই বাসায় বাবা মায়ের প্রতিদিনের ঝগড়াঝাটি তাকে বাধ্য করেছে এই থানা পুলিশ খুজে বের করে সেখানে কমপ্লেইন করতে। অনেক বাবা মা আছেন, প্রতিদিন কথায় কথায় ছোটবড় বিভিন্ন বিষয় নিয়েই অযথা চিল্লাচিল্লি করা যাদের রুটিন ওয়ার্ক।

এই যে কর্কস গলা এবং কর্কস ভাষায় প্রতিদিন বাচ্চাদের সামনেই এমন বেতাল ঝগড়াঝাটি করেন, এর ভবিষ্যৎ প্রভাব সম্পর্কে কি কখনো ভেবে দেখেছেন আপনারা?দুটো দিন যেতে দিন,এই আপনার নরম কোমল বাচ্চারা যারা মাথা তুলেও কোনদিন আপনার দিকে তাকিয়ে কথা বলেনি তারাই আপনার মুখে মুখে তর্ক করবে। জায়গায় বেজায়গায় বেফাস কথা বলবে। শুধু এটুকু হলে তো ভালোই ছিলো,আরো কি করবে তারা জানেন? তাদের মানসিক বিকাশ ঠিকভাবে ঘটবে না,সংসার বিয়ে সর্বোপরি এক ছাদের নীচে থাকাতেই তাদের তীব্র অনীহা চলে আসবে।

এভাবে অমূলক ঝগড়া কেন করবেন বলুন !তারচেয়ে যে কোন বিষয়ে দুজনেই ক্লিয়ার কাট কথা বলুন,নিজেদের মধ্যে স্যক্রিফাইজ, কম্প্রোমাইজ ইত্যাদি শব্দগুলিকে ঢুকতে দিন। একজন আরেকজনকে বোঝার চেষ্টা করুন,নমনীয় হোন আর অপরপক্ষের প্রতি  ভালোবাসাটাও ধরে রাখতে শিখুন।

একজন আরেকজনকে হ্যান্ডেল করতে শিখুন। শুনুন সব মানুষ এক নয় যেমন এটা সত্যি তেমনি সব মানুষকে একভাবে হ্যান্ডেল করা যায় ও না এটাও চিরন্তন সত্যি। তাই আপনার সঙ্গী কেমন, তার মন মেজাজ ভালো লাগা খারাপ লাগা সবকিছু বোঝার এবং বুঝে সঙ্গী টাকে সে অনুযায়ী হ্যান্ডেল করাটাও জেনে নিন।

একজন মানুষ কখনোই শতভাগ ভালো হতে পারেনা,দোষে গুনে মিলিয়েই আমরা সবাই মানুষ।রাগ মানুষের হতেই পারে তাই যথার্থ হবে এটাই একজন যখন প্রচণ্ড রেগে গেছেন,আরেকজন না হয় আপাতত চুপ থাকেন।পরবর্তীতে তার মেজাজ ঠাণ্ডা হলে তাকে বুঝায় বলেন।কিন্তু তার মানে এইও না সবসময়ই একজন চীৎকার করবে আরেকজন শুধু চুপচাপ সহ্য করে যাবে। নিজেদের ভেতরের ইগো রাগ হিংসা ইত্যাদি যটতা সম্ভব বাদ দিয়ে দিন এখন থেকেই।একটা কথা মনে রাখবেন,কথা বলার আগে অপরপক্ষের কথা শোনাটা বেশী জরুরী।  তাই আগেই অস্থির না হয়ে অপরপক্ষের কথা ভালো করে শুনে নিন।

ধৈর্য্য বড় মহৎ গুণ জানেন সবাই,কিন্তু কেন মহৎ তা জানেন?শুধু এজন্যই না যে আপনার ধৈর্য্য আছে তাই আপনি সব সহ্য করে যাবেন।এ ছাড়াও আরো অনেক ব্যাপার জড়িয়ে আছে এই ধৈর্য্য শব্দটার সাথে।

তাই আপনার ধৈর্য্য বাড়ানোর চেষ্টা করুন। এটা জেনে রাখবেন,ঝগড়া করবেন হয়তো দুজনে কিন্তু ভুক্তভোগী শুধু দুজনে না।পরিবারের সব সদস্যরা বিশেষ করে বাচ্চারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আপনাদের এই ঝগড়াঝাটি থেকে। তাই,আজকে থেকেই এসব ঝগড়াঝাটি বাদ দিন।ভালোভাবে সংসারের সবাই মিলেঝিলে বাস করুন।অন্তত বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে ঘরে শান্তি আনুন,ঝগড়াঝাটি কে ঝেটিয়ে বিদায় করুন।

ভালো থাকুন,ভালো রাখুন।

ধন্যবাদ।
 

Leave a Comment