হুটহাট প্রিয়জনকে জিজ্ঞেস করুন সে কেমন আছে!

  • ফারজানা আক্তার 
  • জুলাই ১২, ২০১৯

খুব ছোট একটি প্রশ্ন, 'কেমন আছো? / কেমন আছিস? / কেমন আছেন?' জিজ্ঞেস করা হয় কাছের মানুষদের? সাধারণত অপরিচিত মানুষদের সাথে যখন পরিচয় হয়, অফিসিয়ালি সম্পর্ক যাদের সাথে বা হুটহাট যাদের সাথে কথা বলা হয় তাদেরকে কথার শুরুতে সম্পর্কের ধরণ অনুযায়ী 'কেমন আছো? / কেমন আছিস? / কেমন আছেন?' আমরা জিজ্ঞেস করে থাকি।

এই প্রশ্নটা কিন্তু অনেকেই আসলে সে কেমন আছে সেটা জানার জন্য করে না। কথার শুরুতে শুধুমাত্র ফর্মালিটির মেইনটেইন করার জন্য করে থাকে ।আচ্ছা ব্যাপারটা যদি এমন হতো! যেমন ধরুন আপনার বউ সারাদিন সংসার আর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আপনি সেই সকালে বের হন, রাতে বাসায় ফিরেন।

একদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হুট করে আপনার বউকে জিজ্ঞেস করলেন, 'কেমন আছো তুমি? একা হাতে বাচ্চা আর সংসার সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার?'প্রশ্নটা করে আপনি তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকুন। আপনি দেখতে পাবেন অবাক এবং বিস্ময়ে তার চোখ ছলছল করছে।কিছু একটা উত্তর সে দিতে চাচ্ছে কিন্তু গলায় আটকে যাচ্ছে। কোনরকমে নিজেকে সামলিয়ে মাথা দুইপাশে নেড়ে আপনাকে জবাব দিবে, 'না না! তেমন কোন কষ্ট হচ্ছে না।'

আপনার ছোট্ট এই একটি প্রশ্ন করার আগ পর্যন্ত তার যে কষ্ট হচ্ছিলো সেটা উড়ে গিয়েছে। সে বুঝে গিয়েছে তার কষ্টটুকু অনুভব করার জন্য কেউ একজন আছে। তার কথা শত ব্যস্ততার মধ্যেও আড়ালে একজন ভাবে। এতটুকু অনুভূতিই যে কোন মানুষের সব কষ্ট নিমিষেই হাওয়া করে দিতে সক্ষম।আবার ধরুন, আপনার স্বামী সারাদিনের কর্মব্যস্ত জীবন অফিস, জ্যাম, বসের পেইন শেষ করে বাসায় ফিরলো। বাসায় ফেরার পর থেকেই আপনি শুরু করলেন আলু, তেল, পেঁয়াজ আর পাশের বাসার ভাবীর গল্প। এটা সত্যি একটা সময় যেয়ে সংসারটা আলু, তেল, মরিচ আর পেঁয়াজে আটকে যায়।

কিন্তু আপনাকে মাথায় রাখতে হবে দিনশেষে আপনার স্বামীও একজন মানুষ। সংসারের সকল প্রয়োজন মেটানোর ম্যাশিন নন। হুটহাট তার পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করুন, 'কেমন আছো তুমি? অফিসে কি কাজের খুব প্রেশার? বসের সাথে কোন প্রব্লেম হচ্ছে? ইদানিং কি জ্যামটা বেড়েছে?'আবার মনে করেন আপনার বাসায় বৃদ্ধ মানুষ আছে। কোন একদিন তার পাশে বসুন। হুট্ করে তার কোন পছন্দের বিষয় নিয়ে তার সাথে আলোচনা শুরু করুন। কথা বলার মাঝে তার চেহারার দিকে খেয়াল করে দেখবেন কতটা উজ্জ্বল দেখায়!

বৃদ্ধ মানুষেরা সমাজে এবং পরিবারে নিজেদেরকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন। যখন তাদেরকে প্রায়োরিটি দেওয়া হয় তখন তাদেরকে কতটা প্রফুল্ল দেখায় নিজের চোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না।কোন একজন মানুষের সাথে আপনার খুব ভালো একটি সম্পর্ক রয়েছে। আপনি জানেন সে কোন শারীরিক বা মানসিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কথার মাধ্যমে আপনি তাকে অনুভব করান আপনি তার পাশে আছেন।

সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, আর সম্পর্ক চিরস্থায়ী। আপনি যে ধরণের সম্পর্কেই থাকুন না কেন খুব ছোট্ট করে হলেও সেই সম্পর্কের যত্ন নিন। সম্পর্কের যত্নের ক্ষেত্রে কোন অজুহাত দাঁড় করাবেন না। সম্পর্কের যত্ন নিন, সাথে মানুষটারও।

Leave a Comment