ছেলে বিয়ে দেয়ার পর শ্বশুরবাড়ির লোক মাননীয় স্পিকার হয়ে যান

  • রোমানা আক্তার - শুদ্ধবালিকা
  • জুলাই ১৫, ২০১৯

আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়ের বিয়ে হয় জন্ম থেকে বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত অর্জিত তার নিজের ও পরিবারের তিলে তিলে অর্জন করা সম্মানের বলি দানের জন্য। আর শ্বশুরবাড়ি জাত ফকিন্নি হলেও ছেলে বিয়ে দেয়ার পর পরই তারা মহা মান্য স্পিকার হয়ে যান। খেয়াল করে দেখবেন, শ্বশুরবাড়ির লোকদের অপরাধ স্বীকার করার গুণ একেবারে শূন্যের কোটায়। এক্ষেত্রে তারা নীরব হয়ে থাকলেও ব্যাপারটা খুব একটা সমস্যার হতো না। কিন্তু তারা যেটা করে, বড়লোকি ফুটানি করতে গিয়ে নিজের করা অপরাধের দায়ভারটা বউয়ের ও তার পরিবারের কাঁধে এমনভাবে চাপিয়ে দেয় যে, সব দোষ বউয়ের, বউয়ের পরিবারের, তাদের ভুলের জন্যই ইনারা সামর্থ্য থাকা সত্বেও কিছু করে নাই। ক্ষেত্রবিশেষে এই অপরাধের দায় তাদের ছেলের কাঁধেও আসে যদি ছেলে একটু বউ দরদি হয়। তখন বয়ান আসে এমন যে, "কেমন বেটা হইছোস, বউরে সামলাইতে পারোস না, আজকে তোর জন্য ওদের সাথে ভালো কিছু করতে গিয়েও করি না।" আর যদি হয় ছেলের নিজের পছন্দের বিয়ে তাহলেতো হলোই, "কি মাইয়া বিয়া করসোস?প্যাক... প্যাক.. প্যাক..(এখানে মনের মাধুরি মিশিয়ে বউকে ঘিরে যা খুশি তাই বলা জায়েজ)"

দেশীয় প্রেক্ষাপটে মনে হয়, একজন বউ হচ্ছে মিষ্টিকুমড়া, আর শ্বশুরবাড়ি হচ্ছে দা। দায়ের ইচ্ছে হলো মিষ্টি কুমড়াটাকে এক দিনে কাটি কুটি করে কাজ কমিয়ে রাখবে, আবার ভাবছে এক দিনে এতো চাপ নিয়ে কি হবে? অর্ধেকটা করে কাটা হোক, পরক্ষণেই মনে হবে চার ফালি করলে ভালো হবে, এর ওর ঘরেও দেয়া যাবে। এইরকম হলেও হতো, কিন্তু এত্তো বড় কুমড়ার চাক রান্না করা যাবে না। এখন শুরু হবে, ছোট ছোট চাক করে ভাজি করা হোক, আবার মনে হবে কুচিকুচি করে চিংড়ি দিয়ে রান্না হোক। এমন সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎই মনে হবে বিচি গুলো ফেলবো কেন, বুক খুঁড়ে সেগুলো তুলে ভেজে খেলে মজা হবে, খোসাটা পাতলা করে না ছাড়িয়ে ভারি করে ছাড়ালে সেই খোসার ভর্তা খাওয়া যাবে। কুমড়ার ডান্ডিটা টুস করে ভেঙ্গে ফেলে আস্ত কুমড়াটাই ভোগে চলে যায়। ডান্ডি ভেঙ্গে ফেলা হলো মানে মেয়েটার লালিত সকল স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলো। খুব কম মানুষের পক্ষেই সম্ভব টাটকা একটা মিষ্টি কুমড়ার সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে সেটাকে গলাধকরণ না করে যত্ন সহকারে রেখে দেয়া। বাগানের টাটকা মিষ্টি কুমড়া দেখলে জিভটা যেমন বাহারি টেস্টের কথা মনে করে লকলক করে তখনি শুরু হয় দা'এর কেরামতি। তেমনি বাসায় নতুন বউ আসার পরই শুরু হয়ে যায় শ্বশুরবাড়ির কেরামতি।

এসব কেরামতির কেরামত নিয়া কাউকে কিছু বলা যাবে না। এতে করে তাদের স্পিকারের আসন কলঙ্কিত করার দায় সেই বউয়ের ঘাড়েই পড়ে। ব্যাপারটা এমন যে, বউ ভালো হলে কি আর শ্বশুরবাড়ির বদনাম করে?  পরিস্থিতি বেশ ঘোলা হলে তখন সুর আসে, "পরে কি আর সমাধান দিতে পারবে? আমাদের বললেইতো হতো।" অর্থাৎ, অত্যাচার করবে তারা, আবার বিচারের দায়ভারও নিতে চায় তারা। কোন কোন শ্বশুরবাড়ি আছে যারা অত্যাচার মেনে নেয়ার পক্ষে বাণী আওড়ায় আদরের বুলি দিয়ে, "অসঙ্গতি থাকেই, মেনে নাও।" মানে তারা বুঝিয়ে দিচ্ছে আমরা তোমার সাথে অসঙ্গতি মূলক আচরণ করছি, করবো কিন্তু এ নিয়ে কোন কথা হবে না, চুপচাপ মেনে নাও।"

অনেক অনেক শ্বশুরবাড়ির লোকদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সারমর্ম অধিকাংশ সময় এটাই পেয়েছি যে, আমরা খারাপ কাজ করবো এটা দোষ নয়, বউ সেই খারাপটা অন্যকে জানিয়ে দিয়েছে এটাই দোষ। আমরা অসম্মানজনক আচরণ করবো এটা সমস্যা নয়, বউ সেটা টপকে আমাদের সম্মান করতে পারছে না এটা দোষ। আমরা ছোটলোকি চালচলন করবো এটা অন্যায় নয়, বউটা কেন আমাকে  ছোট করছে এটাই দোষ। ব্যাপারটা হলো, যতো দোষ নন্দ ঘোষ।

এখন অনেকেই বলবে, খারাপ বউদের কথা বললাম না কেন? যদিও এ নিয়ে কিছুদিন আগেই লিখেছি।সত্যি বলতে অনেক সময় মনে হয় যুগে যুগে এই যে খারাপ বউদের আবির্ভাব ঘটছে এটা "Revenge of nature". নারীরা একপাক্ষিকভাবে এতো পরিমাণ বিবাহ নামে বলি প্রদান হয়েছে যে সেসব ইতিহাস জেনে এবং বর্তমানে নারীর অর্জিত সম্মানকে গণায় না ধরে তাকে অসম্মান করাটাকেই মূখ্য হিসেবে ধরে নিতে দেখে অনেক মেয়ে বিয়ের আগেই ডেসপারেট হয়ে থাকে এইসব অত্যাচার সে নিজের উপর হতে দেবে না। আর চিরাচরিত অত্যাচারের ছোট ছোট প্রতিবাদ থেকে ব্যর্থ হতে হতে সে নিজেই একসময় অত্যাচারী হয়ে উঠে। তবে কোন অত্যাচারই কাম্য নয়।

 

Leave a Comment