‍‍`আমার বন্ধু‍‍`

  • সুমনা বাগচী
  • ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১

বন্ধুত্ব দিবসে আজ মনে হলো এমন একজন বন্ধুর কথা বলা, যা কে ছাড়া আমি সত্যি অচল।আসলে আমরা কিন্তু প্রত্যেকেই অচল। হ্যা.... আমার খুব কাছের বন্ধু আমি। এই কথার মধ্যে যে জোর,নির্ভরতা,ভালোবাসা আর আত্মার সম্পর্ক আছে তা আমরা নিজেরাই বুঝি না। আজ তাই গল্প বলবো...

আমার বন্ধু আমির কথা। এই সম্পর্ক বুঝতে বেশ অনেকটা সময় লেগেছে।কিন্তু শেষে এই নিঃস্বার্থ অনুভূতি বুঝেছি। ছোটো বেলা থেকেই আমার বন্ধু বৃত্ত খুব ছোটো ছিল।সবার কাছে আমি বড়ো ইনোসেন্ট শুনতে হতো।কিন্তু কোনো দিন ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি,স্কুলে ঠিক কেমন ব্যবহার করলে সবার মনের মত হওয়া যাবে।বন্ধু বৃত্তের আলোচনা আমি হা হা করে শুনতাম। কার বাড়ির কি সমস্যা,কোন সিনেমা তে কি আর্টিস্ট, কার মত সাজতে হবে,এই সব গুলো শুনে ভাবতাম, আমাকেও বুঝি এই সব জানতে হবে বুঝতে হবে। সেই বয়সে অন্য দের তুলনায়, নাচ আর গল্পের বই কেই একমাত্র সহায় সম্বল বলে মনে হতো।

আরো পড়ুনঃ শীতকালীন সময়ে শিশুর জন্য বিপজ্জনক পাঁচটি খাবার!

আর আমার কিছু পছন্দের পুতুল ছিল। তাদের সাথে বেশ সময় কাটাতাম ,এছাড়া একান্নবর্তী পরিবারের শিক্ষা,আদর্শ বেশ অন্যরকম ছিল। তাই চার বছরের ছোট ভাইয়ের সাথে হাসি ঠাট্টা,লোকের বাড়ী ঢিল ছোড়া এই ভাবেই সময় কাটাতাম।এমনকি স্কুলেও শুনতে হতো...

আপনার মেয়ে বড্ড ইনোসেন্ট।একটা সময় এই কথাতে ঘেন্না ধরে গেছিলো। এরপর স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে,১ ১/১২ আরেকটি স্কুলে গেলাম।বেশ সুন্দর মুহূর্ত এসেছিল নতুন বন্ধুদের পেয়ে।কিন্তু সেখানেও বন্ধু বৃত্ত বুঝতে বেশ দেরী হলো।কিছু বন্ধুর কাছে অজানা হিংসার কবলে পড়লাম।অযথা বাজে কথা,সমালোচনা, কম্পিটিশন এগুলো নিয়ে অস্থির হলাম।আর কাউকে না বলতে পারতাম না বোঝানো যেত।তাই ওই সব বন্ধুগুলো বেশ সুন্দর লেসন শিখিয়ে গেলো....

খুব তাড়াতাড়ি কাউকে বিশ্বাস করতে নেই। এরপর কলেজ আর কো এডুকেশন। এই সময় অনেকটা বুঝতে শিখে গেছি।তাই আমার আমি কে বেশ আড়ালে রাখলাম।কলেজ মানেই এক অন্য অনুভূতি। প্রেম,ভালোবাসা আরো কত কি।সেই কলেজেই প্রথম বর্ষে দুই বন্ধুকে হারালাম।একজন চলে গেলো বাস অ্যাক্সিডেন্টে আরেক জন আত্মহত্যা করলো।বন্ধুত্ব শুরু হতে না হতেই এ এক সম্পূর্ণ অন্য অধ্যায়।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা করতে গর্ভাবস্থায় খেতে হবে সাতটি খাবার

বাকি দু বছর কাটলো নীরবেই। আস্তে আস্তে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা আরো স্পষ্ট হলো। এরপর ইউনিভার্সিটি। সে অন্য রকম অনুভুতি। অনেক স্বপ্নের আহ্বান।সেখানে আমি অনেকটা পরিণত।তাই বন্ধুত্বে একটা সীমা রেখা নিয়েই চলতাম।কারণ অনেক ধাক্কা খেয়েছি। এরপর অনেকটা বছর অনেক নতুন অধ্যায় আর অনেক কিছু নতুন শেখা ও জানা। সর্বশেষে বুঝলাম, আমরা সবাইকে সময় দিতে গিয়ে নিজেদের ভুলে যাই।অন্যকে ভালোবাসতে গিয়ে নিজেদের ভালোবাসার কথা মনে রাখিনা। অন্যের বিচ্ছেদ বা ব্যবহারে চোখের জল ফেলি কিন্তু নিজের জন্য সেখানেও গুরুত্ব দি না। প্রত্যেক মুহূর্তে সবাইকে খুশি করতে গিয়ে,নিজেদেরকে খুশি করার কথা মনেই থাকে না।

এরপর খুব ভালো করে বুঝলাম।প্রত্যেক সম্পর্ক একটা পার্ট অফ লাইফ। সবার ভূমিকা ও জায়গা অবশ্যই আছে কিন্তু তার মাঝে নিজেদের জায়গাটা ভাবতে ভুলেই যাই। লোকে বলে,স্বার্থপর শুধু নিজের কথা ভাবে।কিন্তু সারাজীবন শুধু অন্যের কথা ভাবতে গিয়ে নিজের সাথে অন্যায় করছি আমরা।তাই না?? হ্যা করছি। একটা সময়ে নিজেকে বোঝালাম।আমি আমার সব থেকে কাছের বন্ধু।

কারণ আমি আমার নিজের আমি কে খুব ভালো বুঝি।মন অস্থির হলে আমি তার কারণ বুঝি, নিজে ভুল করলে আর কেউ না জানুক আমি জানি।কেউ দুঃখ দিলে অজান্তেই নিজের মনের কাছে নিজেই থাকি।কারণ আমি জানি সত্যি আর মিথ্যা কি। এই ভাবে কেউ ভেবেছেন? বন্ধু জীবনে আসবে যাবে, কিন্তু আপনি আপনার সাথে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকবেন।

আরো পড়ুনঃ কোন নারীদের যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি জানুন!

এই রকম গল্প হলে নিজের সত্তাকে খুজে পাওয়া যায়। হয় তো সময়ের সাথে তাতে ধুলো জমেছে।নিজেই মুছে নিয়ে নিজেকে ভালোবাসুন। তাই সব কিছুর পরেও।আমি আমার বন্ধু নিজেকে মনে করি। আপনারাও কি মনে করেন ?? মনে রাখুন আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নিজেদের জন্য জরুরী। তাই ভালোবাসুন নিজেকে। 

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment