আপনার সন্তানকে ধনী নয়; মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিন। 

  • ফারজানা আক্তার 
  • এপ্রিল ২৯, ২০২১

যে কোন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর জ্ঞানী - গুণী, বিজ্ঞ - অভিজ্ঞ, লেখক - কবি, পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানকার সকলে নানান ধরণের মতামত দেওয়া শুরু করেন। কেউ বুঝে, কেউ জেনে, কেউ না বুঝে, কেউ না জেনে এবং কেউ কেউ সবাই দিচ্ছে আমি না দিলে কেমন লাগে এমনটা ভেবে মতামত দিয়ে থাকেন। 

মতামত দেওয়ার অধিকার সকলের আছে, কিন্তু মেইন পয়েন্ট থেকে সরে গিয়ে দুই তিন পক্ষ ভাগ হয়ে একপক্ষ অপর পক্ষকে কাঁদা ছুঁড়ে সত্যিকার অর্থে কোন বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করছে বুঝা মুশকিল। সাম্প্রতিক যে ইস্যু নিয়ে ফেসবুক গরম তা হলো মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামের এক তরুণীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান। 

আরো পড়ুন : এই দেশে মেয়ে হয়ে জন্মানোটা আজন্ম পাপ!

শুরুতে যে প্রশ্ন আসে তা হলো তাদের মধ্যে সম্পর্ক কী ছিল ? সামাজিক মর্যাদাসম্পূর্ণ কোন সম্পর্ক তাদের মধ্যে ছিল না। ভালোবাসার সম্পর্কও ছিল না। কারণ সায়েম সোবহান বিবাহিত ছিলেন। ঘরে বউ রেখে বাহিরে কারো সাথে সম্পর্কে জড়ালে সেটা প্রেম বা ভালোবাসা হয় না , পরকীয়া হয়।

সায়েম সাদিকের ছিল অঢেল টাকা আর ক্ষমতা, অন্যদিকে মুনিয়া ছিল সুন্দরী। প্রাপ্তবয়স্ক দুইজন মানুষ একজনের প্রয়োজন ছিল বিলাসিতা, অন্যজনের শরীর। দুইজন দুইজনের চাহিদা মোতাবেক চুক্তিবন্ধ ছিলেন। এখানে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আমরা কোন মতামত দিতে পারি না। কিন্তু সমাজ বহির্ভুত যে কাজ উনারা করেছেন সেটা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হতে পারে। 

আরো পড়ুন : সব দোষ শুধু মায়ের ? বাবারা কেন দোষের ভাগিদার হন না ?

নিউজ পড়ে যতটুকু জানতে পারলাম মুনিয়ার বাবা - মা বেঁচে নেই। ভাই আলাদা থাকেন এবং বহুদিন মুনিয়া এবং তার বড় বোনের সাথে ভাইয়ের যোগাযোগ ছিল না। মুনিয়ার একমাত্র গার্ডিয়ান তার বড় বোন ছিল। দুই বছর ধরে ঢাকার গুলশানে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে মুনিয়া থাকতো; তার বড় বোন সেটা জানতো না ? ছোট বোন আলিশান জীবনযাপন করে সেটা বড় বোনের অজানা ছিল ?

আপনার উত্তর কী হবে আমার জানা নেই। তবে আমি বলছি তার বড় বোন সব জানতো। ছোট বোন ভুল পথে আছে এবং ভুল কাজ করছে সেটা শুধরে দেওয়ার দায়িত্ব কার ? নিশ্চয় বড় বোনের ? বড় বোন কি তার দায়িত্ব পালন করেছেন ? নাকি নিজের স্বার্থ হাছিলে ব্যস্ত ছিলেন ?

আরো পড়ুন : হে নারী! মনের দাসত্ব থেকে বের হয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুন 

 

মুনিয়ার বয়স কম, তবে একেবারেই কম কিন্তু নয়। ২১+ বয়সে অনেক মেয়ে সংসারের হাল ধরে, অনেক মেয়ে মা হয়। অনেক মেয়ে সমাজে টিকে থাকতে তীব্র লড়াই করে, অনেক মেয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণে ব্যস্ত থাকে এবং অনেক মেয়ে নিজেকে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের কাছে সঁপে দিয়ে আলিশান জীবন ভোগ করতে চায়। শেষে অনেকের পরিণতি মুনিয়ার মতো হয়। 

এই ধরণের ঘটনায় সাধারণত আগে পিছে মধ্যখানে মেয়েকেই দোষী ধরা হয়। সবাই মুনিয়াকে লোভী এবং চরিত্রহীন ছিল। আমরা হয়তো ভুলে যাচ্ছি মুনিয়া লোভী এবং চরিত্রহীন হয়ে জন্মায়নি। আমি, আপনি যেভাবে নিষ্পাপ হয়ে জন্মেছি, মুনিয়াও সেভাবে জন্মেছে। তাকে যে শিক্ষা দিয়ে বড় করা হয়েছে অথবা সে ভুল পথে আছে জেনেও যে পরিবার তাকে শুধরে দেয়নি ; সেই পরিবার কি দোষী নয় ?

আরো পড়ুন : আপনার জীবনসঙ্গী কি সাপোর্টিভ?

আপনারা কি বিশ্বাস করেন মুনিয়া সায়েম সোবহানের প্রথম শিকার ? এর আগে সে আর এই অপকর্ম করেনি ? অবশ্যই করেছে। তার পরিবার এই বিষয়ে জানে না ? তার বিবাহিত বউ জানে না ? ভিকটিমরা না হয় ভয়ে মুখ খুলেনি কিংবা টাকা দিয়ে ভিকটিমদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে! কিন্তু সায়েমের পরিবার তাকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেনি কিংবা চেষ্টা করেনি। ভেবেছে টাকা দিয়ে সকলকিছু তারা কিনে নিবে এবং নিচ্ছেও। 

ঘটনার সামনের অংশ নিয়ে আমরা মাতামাতি করি। গোড়ায় হাত দেই না। সায়েমের পরিবারে জবাবদিহিতা নেই , আর মুনিয়ার পরিবার অন্যের টাকা আর ক্ষমতাতে লোভ দিয়েছিল। সায়েমের পরিবারে জবাবদিহিতা না থাকলেও টাকা আর ক্ষমতা আছে। তার কিছুই হবে না। মুনিয়ার বোন এর মধ্যে বেশ টাকা - পয়সা কামিয়ে নিয়েছে। বেচারি মুনিয়া, সে আসলে দুইপক্ষের খেলনা ছিল। খেলা শেষে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে আত্মঘাতী হয়েছে।  

আরো পড়ুন : মেয়েরা কেন নিজের একটি বাড়ি করতে পারে না?

মুনিয়া অপরাধী হলেও ওর জন্য আমার মনে বেশ মায়া হচ্ছে। দিন - দুনিয়া চেনার আগে বিলাসিতার খোঁজ পেয়ে গিয়েছিল । বাস্তবতা বুঝার সাথে সাথে দুনিয়া ত্যাগ করেছে। বিলাসিতা পেয়েছে তবে অন্যের মনোরঞ্জন করে। সত্যিকারের স্নেহ , মায়া - মমতা, ভালোবাসা সে পায়নি। 

সায়েম দেশ ছেড়েছে, মুনিয়া দুনিয়া ত্যাগ করেছে, ওর বড় বোন এখন মায়াকান্না করছে। আমরা সবাই স্ট্যাটাস দিলাম, মতামত দিলাম। 

তরপর ?

নতুন ইস্যু আসবে। আমরা এই ইস্যু ভুলে যাবো। হুট করে আবার কোন মুনিয়ার আত্মঘাতীর ঘটনায় সব নড়েচড়ে উঠবে। কিন্তু এভাবে কতদিন ? 

আরো পড়ুন : হে বেশিরভাগ পুরুষেরা! আপনাদের কিসের এতো ভয়? 

সায়েমের বিচারের ব্যবস্থা করতে না পারি; নতুন কোন মুনিয়ার জন্ম যেন না হয় সেই বিষয়ে সচেতন তো হতে পারি ? আপনার সন্তানের দেখভাল করুন। তাদের সময় দিন। তাদের মন খুলে কথা বলার পরিবেশ দিন। কোথায় যাচ্ছে, কাদের সাথে মিশছে সেইসব বিষয়ে খোঁজ নিন। সঠিক সময়ে সঠিক শাসনটি করুন।  নিজের সামর্থ্যের কথা তাদের সাথে শেয়ার করুন।  ধনী নয়; মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিন। 
  

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment