যেভাবে তারা বেঁচে ফিরলেন
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- মার্চ ১৩, ২০১৮
নেপালে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস বাংলার প্লেনটির ৫০ যাত্রীর মৃত্যু হলেও আহত অবস্থায় বেঁচে ফিরেছেন ২১ জন। বাংলাদেশী ৩২ যাত্রীর মধ্যে জীবিত আছেন আট জন। জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালের বেড থেকে সাংবাদিকদের কাছে বর্ণনা দিয়েছেন দুর্ঘটনা মুহূর্তের সেই ভয়াবহ স্মৃতি। বলেছেন কীভাবে তারা বেঁচে ফিরলেন। বেঁচে ফেরাদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশী শাহরিন হক নেপালের সংবাদমাধ্যম হিমালয়ান টাইমসকে বলেছেন তার অভিজ্ঞতার কথা। ‘আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে ভ্রমণ করছিলাম। বিমানটি অবতরণ করার সময় এটি বামদিকে ঘুরতে শুরু করেছিল। লোকজন চিৎকার করছিল। আমরা পেছনে তাকিয়ে দেখি প্লেনটিতে আগুন ধরে গেছে। আমার বন্ধু আমাকে তার সামনে দৌড়াতে বলে।’
‘কিন্তু আমরা যখন দৌড়াচ্ছিলাম আগুন তাকে গ্রাস করে ফেলে। সে পড়ে যায়। লোকজন পুড়ছিল, চিৎকার করছিল এবং পড়ে যাচ্ছিল। তিন জন লোক লাফিয়ে পড়ে প্লেন থেকে। আমি ভীত হয়ে পড়ি। কিন্তু ভাগ্যক্রমে কেউ একজন আমাকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসে,’ অশ্রুসজল কণ্ঠে বলেন শাহরিন। পেশায় শিক্ষক শাহরিন (২৯) কাঠমান্ডু এবং পোখারা দেখতে গিয়েছিলেন। তার মতো পর্যটক হিসেবে নেপাল যাচ্ছিলেন আরো কয়েকজন। স্ত্রী, কন্যা এবং এক আত্মীয়কে নিয়ে প্রথমবারের মতো আকাশপথে ভ্রমণ করা বাংলাদেশী মেহেদী হাসান বলেন: আমার সিট ছিলো পেছনের দিকে। আগুন দেখেই আমি আমার পরিবারের লোকজনের খোঁজ করি। আমরা জানালা ভাঙার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। আমরা খুঁজছিলাম কেউ আমাদের এসে উদ্ধার করুক।
‘আমি এবং আমার স্ত্রী উদ্ধার পেলেও আমার কন্যা এবং আত্মীয়কে হারিয়ে ফেলি।’ বেঁচে যাওয়া অন্য এক যাত্রী কেশব পান্ডে আগুনের কথা স্মরণ করতে পারলেও কীভাবে বেঁচে ফিরলেন সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। বিবিসিকে তিনি বলেন, প্লেনটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর আমি সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কারণ এতে আগুন ধরে গিয়েছিল।কিন্তু পারছিলাম না। আমার হাত এবং পা আটকা পড়ে। ‘আমি ইমার্জেন্সি এক্সিটের সামনে বসেছিলাম। তাই সম্ভবত যখন নিরাপত্তা কর্মীরা এসে দরজা খোলে আমি তখন বাইরে ছিটকে পড়ি।’
বসন্ত বোহরা নামে একজন বলেন, হঠাৎই প্লেনটি ভয়াবহভাবে ঝাঁকুনি দিতে শুরু এবং বিকট শব্দ হয়। আমি জানালার পাশে বসেছিলাম বলে তা ভেঙে ফেলতে সক্ষম হই। দুর্ঘটনাস্থলের বর্ণনা দিয়ে পাশের একটি প্লেনের যাত্রী শ্রাধা গিরি বিবিসিকে বলেন, সেখানে অনেক বিশৃঙ্খলা হচ্ছিল। নিরাপত্তা কর্মীরা ছুটোছুটি করছিলেন। অনেক অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার ট্রাক বিধ্বস্ত বিমানটির দিকে যাচ্ছিল। ‘আমার ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে এমন অবস্থা দেখে আমি ট্রমাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি… সবাইকে নাড়া দেয় যখন এমনটি ঘটনা আপনার চোখের সামনে ঘটে।’ আহতদের নেপালের বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
৭৮ জন ধারণক্ষমতার বোমবার্ডিয়ার ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজটিতে ৭১ জন আরোহী ছিলেন; যার মধ্যে ৬৭ জন যাত্রী এবং চার জন ক্রু। সাঁইত্রিশ জন পুরুষ ও ২৭ জন নারী ছাড়াও উড়োজাহাজটিতে কয়েকজন শিশুও ছিল। সোমবার ঢাকা বিমান বন্দর ছেড়ে যাওয়ার প্রায় সোয়া ঘণ্টা পর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন এয়ারপোর্টের রানওয়েতে দুর্ঘটনায় পড়ে ইউএস বাংলার ফ্লাইট বিএস টু ওয়ান ওয়ান। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নেপাল এবং বাংলাদেশ।
ছবি ও তথ্য : চ্যানেলআইঅনলাইন