প্রিয় কবি আল মাহমুদ
- ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল
- মার্চ ১৪, ২০১৯
কোনো এক ভোর বেলা, রাত্রি শেষে শুভ শুক্রবারে
মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ
অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে
ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ।
বাংলা সাহিত্যের অসাধারণ একজন কবি আল মাহমুদ বিদায় নিয়েছেন এই পৃথিবী থেকে। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে হারিয়ে গেছেন কবি চিরতরে। চলে গেছেন মহান স্রষ্টার কাছে। আল্লাহ্ কবির সুপ্ত ইচ্ছে পূরণ করেছেন। শুক্রবারেই তিনি বিদায় নিয়েছেন এই পৃথিবী থেকে। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই বর্ষার এক রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে কবি জন্মগ্রহণ করেন। এক ব্যবসায়ী পরিবারে তাঁর জন্ম। কিন্তু তিনি ব্যবসার দিকে আকৃষ্ট হননি । হয়েছেন কবি। আল মাহমুদের বাবার নাম মীর আবদুর রব এবং মায়ের নাম রওশন আরা মীর। বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামের হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন কবি। এই সময় থেকেই তিনি লিখতে শুরু করেন। কিন্তু কে ভেবেছিল একদিন তিনিই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা কবিতে পরিণত হবেন।
মাত্র ১৮ বছর বয়স অর্থাৎ ১৯৫৪ সালে সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে কবি ঢাকা আসেন। তখন থেকেই তাঁর বিভিন্ন কবিতা প্রকাশ পেতে থাকে। নাম ছড়াতে থাকে আস্তে আস্তে।কবি ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী। ঢাকায় আসার কয়েক বছরের মধ্যেই কবিতা লিখে একের পর এক সাফল্য লাভ করতে থাকেন।১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় লোক-লোকান্তর। এই গ্রন্থই তাকে স্বনামধন্য কবিদের মাঝে জায়গা করে দেয়। এরপর লিখে ফেলেন কালের কলস , সোনালি কাবিন এর মত অমর কাব্যগ্রন্থ। এসব কাব্যগ্রন্থগুলো তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে দেয়। পরিচিতি পেয়ে যান সবার মাঝে। ১৯৭১ সালে কবি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।যুদ্ধের পরে ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি একবার জেল খাটেন। পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে শিল্পকলা একাডেমির সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
আল মাহমুদ তাঁর কবিতায় মৌলিকত্ব দেখিয়েছেন। কবিতায় ব্যবহার করেছেন লোকজ উপাদান। বাংলাদেশের রূপ লেখেছেন তার কবিতায়।তিনি যেভাবে এসব লিখেছেন আর কোনো কবির পক্ষেই তা সম্ভব হয় নি।পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট লেখক এবং সমালোচক শিবনারায়ণ রায় বলেছিলেন, “ বাংলা কবিতায় নতুন সম্ভাবনা এনেছেন আল মাহমুদ, পশ্চিম বাংলার কবিরা যা পারেনি তিনি সেই অসাধ্য সাধন করেছেন। ” সত্যিই বাংলা কবিতার রাজপুত্র ছিলেন তিনি। ১৯৯০-এর দশক থেকে তাঁর কবিতায় ইসলামি আদর্শের প্রতিফলন ঘটতে থাকে । ফলে এক শ্রেণির মানুষ তাঁর সমালোচনায় মেতে ওঠে।তাঁর কবিতার থেকে ব্যাক্তিসত্তার সমালোচনাই মুখ্য হয়ে উঠে। তিনি কষ্ট পেয়েছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। দমে যাননি তবুও কবি । লিখে গেছেন অবিরত।
আল মাহমুদ বেঁচে থাকবেন তাঁর কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে এবং আরও নানা লেখায়। লোক লোকান্তর , সোনালি কাবিন, বখতিয়ারের ঘোড়া, কালের কলস এসব অমর সৃষ্টি থেকে যাবে। যেতে চেয়েছিলেন কবি পাখির কাছে ফুলের কাছে । সেখানেই তিনি চলে গেছেন। বাংলা একাডেমী এবং একুশে পদক পেলেও কবি পাননি স্বাধীনতা পুরষ্কার । কিন্তু পেয়েছেন বেশিরভাগ মানুষের ভালবাসা । তাঁর নাম থেকে যাবে। বাংলা কবিতার কথা উঠলে তার কথা বলতেই হবে। প্রার্থনা করি প্রিয় কবি ভাল থাকুন ওপারে ।
টি/আ