একজন সাধারণ মেয়ে থেকে ‍‍`অনুপ্রেরণা‍‍` হয়ে উঠার গল্প

  • অনুক্তা ঘোষাল
  • মার্চ ১৩, ২০২১

একটা খুব সাধারণ মেয়ে যখন বড় স্বপ্ন দেখে তখন তাকে জীবনে একটা নয় একাধিক লড়াই এর সম্মুখীন হতে হয় । যখন সদ্য কিশোরী তখন মডেল ও অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম। আত্মীয়স্বজন, পরিবারের সদস্যরা তা কিছুতেই মেনে নেয়নি। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।তাই বড় স্বপ্ন আমার জন্য নয়,এমনটাই বলা হয়েছিল আমাকে। ২০১২ সালে কলকাতার এক নামকরা বিউটি কনটেস্টে লুকিয়ে নাম দেই।

এই সময়ে শুধু পাশে ছিল অসুস্থ মা। বিউটি কনটেস্টে ফার্স্ট রানার আপ হয়ে প্রথম সারির বড় বড় সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনের কভারে ছবি বেরতে শুরু করে। এইসময়ে বাড়িতে অসুস্থ মায়ের দেখাশুনো, রান্না থেকে বাজার,পড়াশোনা,মডেলিং, গ্রুপ থিয়েটার সবই চালিয়ে যাচ্ছিলাম মনের জোরে। ২০১৩ সালের শেষের দিকে গুরুতর নার্ভের রোগে সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী হয়ে পড়ি। আমার জীবনটা মুহূর্তের মধ্যে থমকে দাঁড়ায়।

আরো পড়ুনঃ মেয়েলি রোগ লিউকোরিয়ার (সাদাস্রাব ) কারণ ও প্রতিকার

সেইসময়ে হাঁটাচলা এমনকি ভালোভাবে কথা বলাও বন্ধ হয়ে যায়। এসময়ে ডাক্তার জানায় আমি আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব না।আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীরা আমাকে ‘অপয়া’, ‘অপাহিজ’,’বাবা মায়ের বোঝা’,’আনলাকি’ বলে ডাকত।রোজ সকালে মা আমার প্রিয় স্টিলেটোটা এনে আমার সামনে রেখে বলত আমাকে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে।আমি চেষ্টা শুরু করি উঠে দাঁড়ানোর।এইসময় আমার কাউন্সেলিং চলছিল। তাই পাড়ায় নতুন নাম হয়েছিল ‘পাগল’।

দেড় বছরের চেষ্টায় নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াই।ভাবি লড়়াই বুঝি শেষ। কিন্তু ওটাই ছিল শুরু। কেউ আমাকে তাদের বাড়িতে নেমন্তন্ন পর্যন্ত করত না।সবাই বলত বাড়ির বোঝাটাকে বিদায় কর।মায়ের চোখে জল দেখতাম রোজ। একদিন ঠিক করি আর হারব না। পড়াশোনা শুরু করি।একদিন পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

আরো পড়ুনঃ কম খরচে পছন্দমতো সাজিয়ে নিন আপনার ঘর

নিজের জোরে গ্র্যাজুয়েশন,পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ও এম বি এ কমপ্লিট করে বিশ্বের সেরা একটি অডিট ফার্মে (বিগ ফোর) চাকরির সুযোগ পাই। পাশাপাশি শুরু হয় টেলিভিশন অ্যাংকারিং ও মডেলিং।যুক্ত হই সমাজ সেবা মূলক কাজে।

এরপর পরের পর আটটি নামকরা বিউটি কনটেস্টে জয়ী হ্ই।অন্য আরও চারটি নামকরা বিউটি কনটেস্টে টপ ফাইনালিস্ট হই। আবারও বিভিন্ন নামকরা সংবাদপত্র থেকে শুরু করে বড় বড় ম্যাগাজিনে নামসহ ছবি বেরতে শুরু করে। বড় ব্র্যান্ডের ক্যালেন্ডারও ছাপে আমার ছবি দিয়ে। সমাজ সেবামূলক কাজের জন্যও সম্মানিত হই। ২০১৯ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে রেডিও প্রেসেন্টরের ভূমিকায় নিযুক্ত হই।

এখন এমন একটা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি যেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কাউন্সেলিং করানো হবে সমাজের সেই মানুষগুলোকে যারা কোনো না কোনো কারণে জীবনে আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে। তাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখানো হবে সেখানে।তবে লড়াই শেষ হয়না।

আরো পড়ুনঃ ‘ওয়াটার থেরাপি’ -তে আপনার ওজন কমিয়ে নিন খুব সহজে

আজও সমাজের নানা দৃষ্টিভঙ্গীর বিরূদ্ধে একাই লড়াই করে চলেছি।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment