
`আমি নিজেকে শুধুমাত্র অতিক্রম করতে চেয়েছি` : রুমানা বৈশাখী
- ফারজানা আক্তার
- ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৮
তিনি বলেছিলেন,
আমাকে ভালোবাসা চলবে না। ভালোবাসা চলবে না কিছুতেই!
তবুও ভালোবাসা হয়েছিল। সকল নিষেধ অমান্য করে অন্যভুবনের এক রহস্যময় ভালোবাসা, কিংবা ভালোবাসার মতন কিছু একটা! এই গল্প ঝুম ঝুম বৃষ্টির আওয়াজের মতন গভীর একজন পুরুষের। কচি পুঁইপাতা কিংবা সবুজ কুমড়ো লতার মতন সজীব একজন নারী... কিছু ভুল বোঝাবুঝি, কিছু মিথ্যে স্বপ্ন, আর হৃদয় দুমড়ে-মুচড়ে দেয়ার মতন একটা কষ্টের গল্প।
প্রেম, প্রতারণা, পরকীয়ার গল্প...
স্বপ্ন, মৃত্যু, ভালবাসার গল্প...
কখনো কাউকে ভালবেসেছেন নিজের চাইতেও বেশি?
"অ-পার্থিব" তাহলে আপনারই গল্প! "অ-পার্থিব" একটি বইয়ের নাম। এর লেখিকা রুমানা বৈশাখী। যিনি নেশায় মনের কারিগর, পেশায় লাইফস্টাইল জার্নালিস্ট, শখের রাঁধুনি আর অস্থিতে-মজ্জায় রন্ধ্রে-রন্ধ্রে লেখক। প্রিয়.কম কিংবা মিট মনস্টারের নাম শুনলেই যার কথা আগে মাথায় আসে এবং চোখে ভাসে তিনি রুমানা বৈশাখী। ওমেন্স কর্নারের 'সফলদের কথা'-তে আজ থাকছে জনপ্রিয় লেখিকা রুমানা বৈশাখীর জানা অজানা অনেক কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার এবং তানজিলা আক্তার।
ওমেন্সকর্নার : কেমন আছেন ?
রুমানা বৈশাখী : ভালো আছি (হাসি হাসি মুখে )
ওমেন্সকর্নার : আপনার বেড়ে উঠা কোন জেলায় ?
রুমানা বৈশাখী : ঢাকাতেই আমার বেড়ে উঠা। আমার জন্ম কলাবাগানে, ওইখানেই আমাদের নিজেদের বাড়ি। পড়াশোনা করেছি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে। মহসিন হলের পাশেই আমার স্কুল ছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ছিলো স্কুলটি। অগ্রনী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক করেছি। অনার্স, মাস্টার্স করেছি ইডেনে।
ওমেন্সকর্নার : ছোটবেলা খুব দুরন্ত ছিলেন নাকি বাবার শান্ত মেয়ে ?
রুমানা বৈশাখী : সোজা কথায় আমি খুব ঘরকুনো ছিলাম এবং এখনো আছি। বইপত্র ছাড়া আমার জীবনে কিছু ছিলো না। বই আমার ধ্যান-জ্ঞান সব।
ওমেন্সকর্নার : লেখালেখির ঝোঁক প্রথম মাথায় কখন আসে ?
রুমানা বৈশাখী : আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন এক বান্ধবী মারি সিনতা নামে একটি বই আমাকে দেয়। সেই দিনটার কথা আমার আজো মনে আছে। জাফর ইকবাল স্যারের রাজু ও আগুন আলীর ভূত বইটা পড়ে আমার মনে হয়েছে আমি জীবনে অন্য কিছু হবো না, জাফর ইকবাল হবো, আমি জাফর ইকবালই হবো। ওই বইটা পড়ে আমি নিজেই একটা উপন্যাস লিখে ফেলি এবং সেটা আমি সেবা প্রকাশনীতে পাঠিয়ে দেই। তারপর সেবা প্রকাশনী থেকে আমাকে কল দেয়। ক্লাস সিক্সে পড়ি, আমি যে এত ছোট তা তো তারা জানেনা। আমি মা, খালাতো বোন নিয়ে তাদের অফিসে গেলাম। তখন হয়তো কাজী মাইমুর হোসেন ছিলেন সম্ভবত, তিনি আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে বারবার জিজ্ঞাসা করেন আমিই রুমানা বৈশাখী কিনা! তখন তারা বললো পান্ডুলিপিটা আরেকটু বড় করে দিতে। আরেকটু বড় করে দিলে তারা এই গল্পটা ছাপাবে। আমি পান্ডুলিপিটা বাসায় নিয়ে এলাম, আমার বাবা লেখালেখি এতটা পছন্দ করতেন না। তিনি আমাকে একটা ধমক দিয়ে হাত থেকে পান্ডুলিপিটা নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন। আর বললেন, "বইটই পাবলিশ হওয়া যাবেনা। তুমি লেখালেখি কেনো করবা? তুমি ডাক্তার হবা, এই দেশে কি লেখকদের ভাত আছে?" আমার লেখক হওয়ার শুরু ঐ ধমক খেয়েই। বাবা যেদিন আমায় ধমক দিয়ে পান্ডুলিপি ছিঁড়ে ফেললো, ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই আমি জানতাম আমি একজন লেখক হবো, লেখকই হবো, অন্য কিছু হবো না।
ওমেন্সকর্নার : প্রথম লেখা কত বছর বয়সে প্রকাশিত হয় ?
রুমানা বৈশাখী : ক্লাস সিক্সে আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয়, প্রথম আলোর বন্ধুসভায় লিখি ক্লাস সেভেন থেকে। যখন প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকী পাতায় লেখা পাবলিশ হয়, তখন আমি ক্লাস নাইনে বা টেনে পড়ি।। আমার প্রথম গল্পের নাম- 'একজন রাজাকার মারা গেছেন'। আমার লেখা দিয়ে প্রথম নাটক হয় যখন আমি ক্লাস টেইনে পড়ি।
ওমেন্সকর্নার : এখন পর্যন্ত কয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে ? আপনার লেখা সব কয়টি বইয়ের মধ্যে কোন বইটি এগিয়ে রাখবেন ?
রুমানা বৈশাখী : এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ঠিক মনে নেই, যৌথ বই অনেক আছে। মৌলিক বই ২৪টি, অ-পার্থিব বইটা ২৪ নম্বর, চন্দ্রাহত ২৫ নম্বর , কলকাতার শায়াতিন ২৬ নম্বর।
অ-পার্থিবকে আমি এগিয়ে রাখব। এই বইটায় আমি সবথেকে বেশি সময় দিয়েছি। একবছর সময় নিয়ে আমি এই বইটা লিখেছি । আমার কিছু প্রিয় মানুষ, খুব অল্প সময়ের মধ্যে চলে গিয়েছেন । তাদের কথা মনে করে সম্ভবত আমি এই বইটি লিখেছি। আমার যে বইগুলো পুরষ্কার পেয়েছে তাদের থেকেও অনেক বেশি প্রিয় অ-পার্থিব।
ওমেন্সকর্নার : আপনার লেখা কোনো গল্প থেকে নাটক বা শর্ট ফ্লিম কিছু হয়েছে ?
রুমানা বৈশাখী : আমার লেখা গল্প দিয়ে অনেক নাটক হয়েছে এবং হচ্ছে। আজকাল তো ২-৪জন আর্টিষ্ট , ১টি মাত্র লোকেশন নিয়ে নাটক তৈরী হয়ে যায়। আমাকে বলা হয় ২-৪জন আর্টিষ্ট , ১টি লোকেশন মাথায় রেখে গল্প লিখে দিতে। ঐরকম লেখা আমার ধারা সম্ভব না। আমি একজন লেখক, কোনো দর্জি না। আমাকে যেমন আদেশ করবে আমি ওরকম করে বানিয়ে দিবো। লেখার সময় এমন চরিত্র ধরে লেখা যায়না।
ওমেন্সকর্নার : লেখালেখি একটা সৃজনশীল কাজ। সবার দ্বারা এই কাজটি হয় না। লিখে কোন মানুষের মন ছোঁয়া বড় কঠিন কাজ। এই কাজটি আপনি অবলীলায় করে যাচ্ছেন এবং সফলও হচ্ছেন। আপনার তখন কেমন লাগে যখন মানুষ আপনার লেখা পড়ে বলে 'আপু ঠিক আমার মনের কথা বলেছেন'?
রুমানা বৈশাখী : আমি নিজে যা অনুভব করি, আমি ঠিক তাই-ই লিখি। আমি মনে করি আমার সেই ক্ষমতা আছে, আমি আমার চিন্তাভাবনা সুন্দর করে সাজিয়ে প্রকাশ করতে পারি। যখন কেউ বলে আপু আপনি আমার মনের কথা বলে দিলেন, তখন আমার কাছে মনে হয় আমি পেশাগতভাবে সফল একজন লেখিকা । একজন লেখকের এটাই থাকা উচিত।
ওমেন্সকর্নার : লেখালেখি ছাড়া বর্তমানে আর কি কি কাজ করছেন ?
রুমানা বৈশাখী : লেখালিখি ছাড়া এই মুহূর্তে আমার একটা রান্নার শেখাবার ঘরোয়া প্রতিষ্ঠান আছে, শতরঞ্জি ও অন্যান্য কিছু জিনিস নিয়ে রংপুরে একটা অনলাইন স্টোর আছে অ্যালরিডা। লাইফ স্টাইলে জার্নালিজম করি। তবে সবচাইতে জরুরী মিট মনস্টার। এটা একটা অরগানিক ফুড শপ ও কেটারিং হাউজ। আমার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে সবচাইতে সফল এই মুহূর্তে মিট মনস্টার।
ওমেন্সকর্নার : রান্নার হাতেখড়ি কার হাত ধরে অথবা যদি জিজ্ঞেস করি কার রান্না দেখে রান্নার প্রতি আপনার ঝোঁক এলো ?
রুমানা বৈশাখী : আমার মা অসম্ভব ভালো রাঁধুনি। মূলত মায়ের রেসিপি দিয়ে আমার যাত্রা শুরু। মা ও আমার দিদি খালা, এরা দুজন আমার রান্নার আইডল। দিদি খালা বেঁচে নেই, কিন্তু আমি আমার প্রত্যেক রান্নায়, বাগান করায় খালামনিকেই অনুসরণ করি। আমি মানুষকে খাওয়াতে খুব পছন্দ করি, সবথেকে বেশি পছন্দ করি নিজের হাতে রান্না করে মানুষকে খাওয়াতে। সেই পছন্দ করা থেকেই রান্না শিখা।
ওমেন্সকর্নার : নানা পদের এতো এতো রান্না শিখলেন কিভাবে ?রান্নাতে নিজের এক্সপেরিমেন্ট থাকে ?
রুমানা বৈশাখী : যেহেতু রান্না করতে পছন্দ করি, তাই ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করি। রান্নার ম্যাগাজিন দেখি , নিজে নিজের রান্না অনেক এক্সপেরিমেন্ট করি। এভাবেই এতো এতো রান্না শিখা বা জানা।
ওমেন্সকর্নার : আমরা সবাই জানি দুনিয়ার সব মানুষ এক হয় না। আপনি যতই ভালো কাজ করেন কিছু মানুষ আপনার পিছনে লাগবেই। সেই ধারণা থেকে বলছি মিট মনস্টারে নিশ্চয় সবসময় ভালো গ্রাহক আসে না। গ্রাহকদের খারাপ ফিডব্যাকগুলো কিভাবে হ্যান্ডেল করেন ?
রুমানা বৈশাখী : প্রথমত গ্রাহকদের খারাপ রিভিউ মিট মনস্টারে তেমন আসে না। একটা জিনিস নিয়েই খারাপ রিভিউ আসে, সেটা হচ্ছে মুল্য। এবং সেক্ষেত্রে আমি খুব শক্তভাবে বিষয়টা ম্যানেজ করি। কারণ বাজারে ২০ টাকা মূল্যের সাবান আছে, ২০০ টাকা মূল্যেরও আছে, কে কোনটা বেছে নেবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। মিট মনস্টার কাউকে জোর করে পণ্য বিক্রি করে না। সুতরাং মূল্য নিয়ে নেগেটিভ কমেন্ট আমি সহ্য করি না। আরও যে জিনিসটি সহ্য করি না, সেটা হচ্ছে আমার স্টাফদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা। কেউ ডেলিভারি ম্যানের চাকরি করেন বলেই তাঁর সাথে বাজে আচরণ করা যায় না। পণ্য খারাপ হলে আমি নতজানু, হাত জোড় করে ক্ষমা চাই, পণ্য রিপ্লেস করে দিই। কিন্তু অকারণ হয়রানি ভালো লাগে না।
ওমেন্সকর্নার : আপনার প্রিয় কিছু শখের কথা বলেন।
রুমানা বৈশাখী : রান্না করা আমার খুব পছন্দের। রান্না করে সবাইকে খাওয়াতে ভালো লাগে। বাগান করাও আমার খুব শখের। আর আমি সারাদিন বই পড়তে পছন্দ করি। খুব খুব পছন্দ করি বই পড়তে ।
ওমেন্সকর্নার : মিট মনস্টারে কি কি পণ্য পাওয়া যায় ?
রুমানা বৈশাখী : মিট মনস্টারে রান্না, খাবার ও রূপচর্চায় ব্যবহৃত প্রায় ২০০ পণ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রচলিত সকল হারবাল পণ্য তো আছেই, বিদেশ থেকেও এই ধরণের পণ্য নিয়ে আসি । তেল, ঘি, মশলা, সহ হরেক রকমের হাতে তৈরি বিউটি প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। মিট মনস্টারে সবই হাতে তৈরি। সম্প্রতি আমরা বই রাখা শুরু করেছি।
ওমেন্সকর্নার : লেখালেখি, মিট মনস্টার, প্রিয়.কম এতো জায়গায় সময় দিতে হয় আপনাকে ! কিভাবে এতসব ম্যানেজ করেন ? পরিবারকে সময় দেন কখন ?
রুমানা বৈশাখী : আমি খুব কম ঘুমাই। ৩/৪ ঘন্টা ঘুমাই। আমি খুব ভোরে উঠে, মিট মনস্টার থেকে ঘুরে আসি। এহসান নাস্তা করে অফিসে গেলে আমিও অফিসের দিকে রওনা হই। লাইফ স্টাইল নিয়ে কাজটা আমি এই সময়েই করি। বিকেল চারটা-পাঁচটার দিকে আবার মিট মনস্টারে যাই। ফিরে রান্নাবান্না, ঘর গুছানো সব কাজ করি। রাতে বসে পরের দিনের কাজের পরিকল্পনা করে নেই। আমি রান্নার স্কুলে একদিন করে যাই।
ওমেন্সকর্নার : ২০১৮ সালের বইমেলায় পাঠক আপনার কয়টি বই পাচ্ছে ?
রুমানা বৈশাখী : এবার পাঠক ৩টি বই পাবে। বিদ্যা প্রকাশ থেকে অ-পার্থিব, জাগৃতি প্রকাশ হতে চন্দ্রাহত আর কলকাতা থেকে আসবে শায়াতিনি।
ওমেন্সকর্নার : "অ-পার্থিব" বইটি নিয়ে পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
রুমানা বৈশাখী : অ-পার্থিব নিয়ে বলতে গেলে বলবো আমি এখনো আমার নিজের সেরা কাজটা করতে পারি নি। দীপন ভাইয়া (ফয়সল আরেফিন দীপন, জাগৃতি প্রকাশনীর প্রাক্তন কর্ণধার) সবসময় বলতো আমি নাকি প্রত্যেক বই থেকে পরের বইয়ে ইমপ্রুভমেন্ট করি। উনি সবসময় বলতো ইমপ্রুভমেন্ট যেনো বন্ধ না হয়। অ-পার্থিব লেখার কারনটা বলি ২০১৬তে আমার একটা বই পুরষ্কার পেলো, বইটার নাম ছায়ানীরি। বইটা অবহেলা নিয়ে লিখেছি। বইটা প্রকাশের পর আমি যখন পড়তে গেলাম তখন আমার প্রচন্ড বিরক্তি লাগলো। মনে হলো বইটা আমি আরো ভালো লিখতে পারতাম। আমি পুরষ্কারটা তাই নিতে যাইনি। তখন থেকেই অ-পার্থিব লিখবো বলে পরিকল্পনা করি। এখন পর্যন্ত এই বইটাই বেস্ট। এই বইয়ে অনেক বেশি ইমোশন রয়েছে এবং আমি মনোযোগও দিয়েছি খুব বেশি।
ওমেন্সকর্নার : ফেইসবুকের কল্যানে ২-৪লাইন লিখে, ১০০-২০০লাইক পেয়ে মানুষ নিজেকে সেলিব্রিটি মনে করে। এই বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখছেন ?
রুমানা বৈশাখী : ফেসবুকের জনপ্রিয়তা দিয়ে আসলে বাস্তব জীবনে কিছু হয়না, একসময় তারা বুঝবে। অনেক জনপ্রিয় লেখক দেখবেন একটা স্ট্যাটাস দিলে দেড়-দুই হাজার লাইক আসবে। কিন্তু তার বই বিক্রয় হয় না। দুই হাজার লাইক আর লাখ লাখ ফলোয়ারে তবে কি লাভ ! আর পাঠকের বিষয়টা কি ফেইসবুকে লাইকটা ফ্রি, যে কেউ লাইক দিচ্ছে, কিন্তু বইটা পয়সা খরচ করে কিনতে হয়, ওটা ফ্রি না। তাই বাস্তব জীবনে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কোনো কাজে আসেনা।
ওমেন্সকর্নার : নতুন লেখকদের তুলনায় লেখালেখিতে আপনি অনেক সিনিয়র এবং খুব দাপটের সাথে নিজের জায়গায় রয়েছেন। অনেক লেখকই আছে ২-১টি বই বের করে কালের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে। তাদের উদেশ্য আপনি কি বলবেন ? তাদের এই হারিয়ে যাওয়ার কারণ কি ?
রুমানা বৈশাখী : আসলে লেখালিখি পরিশ্রমের ব্যাপার। অনেক পড়াশোনা করে লিখতে হয়। আর একটা কথা আছে না , জনপ্রিয় হওয়া আর সেটা ধরে রাখা আলাদা। জনপ্রিয় হওয়া সোজা, ধরে রাখা কঠিন। একটা ভিডিও বা একটা বই লিখে সব শেষ করলে হবে না। প্রত্যেক বার লেখার সময় নিজেকে অতিক্রম করতে হবে । পাঠক একটা ভালো বই পড়লো, সে পরের বছর আরো ভালো বই চাইবে, আগের নামের উপরই কিনবে। কিন্তু পরের বারের বই ভালো না হলে পাঠক আর বই কিনবে না।
আমি কখনোই চূড়ায় উঠতে চাইনা, চূড়ায় উঠার পর একটাই জায়গা থাকে তা হলো নিচে যাওয়া । আমি প্রতিযোগিতা করি নি, নিজেকে শুধুমাত্র অতিক্রম করতে চেয়েছি । এখন শোনা যায় যে অনেক লেখক টাকা দিয়ে বই বের করে, ব্যাপারটা ইন্ডাস্ট্রি আর দেশের জন্যে এলার্মিং। টাকা কেনো লাগবে, একজন লেখকের জন্যে এটি অসম্মানজনক। কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করে কত টাকা লাগছে বই বের করতে আমি অসম্মানিত বোধ করি। আমার যখন কোনোকিছু ছিলো না তখন বই লিখে টাকা আসতো। বই বের করতে কেনো টাকা লাগবে? এখন দেখি সবাই ভাবে এবং মেনে নিয়েছে টাকা দিয়ে বই করাটাই স্বাবাভিক । এমনিতে বই বের হওয়াটা অস্বাভাবিক ভাবে। আমি সবসময় চাইবো বই বের হবে টাকা ছাড়া। প্রকাশক আগ্রহ করে পান্ডুলিপি কিনে নিবে। আর পান্ডুলিপি প্রকাশক তখনই নিবে যখন আমি এর পিছনে শ্রম দিয়েছি এবং অনেক পড়াশোনা করেছি। আর পাঠক তখনই আপনার লেখা পড়বে যখন পাঠক জানবে আপনি তার থেকে বেশি জানেন। তার থেকে কম জানলে সে আপনার বই পড়বে না।
ওমেন্সকর্নার : অহংকার বোধ কোনো মানুষেরই থাকা উচিত নয়। যারা লেখালেখি করেন তাদের আমরা একটু অন্যরকম ভালো মানুষ মনে করি। কেন মনে করি জানি না কিন্তু আমরা সবাই লেখকদের, শিক্ষকদের একটু অন্য রকম বেশি ভালোবাসি এবং সম্মান করি। ফেইসবুকের কল্যানে আজকাল অনেক তরুণ লেখক অল্প দিনেই খুব বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে এবং সেই সাথে পাল্লা দিয়ে অহংকারবোধ বৃদ্বি পাচ্ছে। অল্প দিনে জনপ্রিয় হওয়া অহংকারী লেখকদের কি বলবেন আপনি ?
রুমানা বৈশাখী : একজন আর্টিস্টের হওয়া উচিত বিনয়ী, লেখকও একজন আর্টিস্ট। তিনি শব্দশিল্পী। বিনয় প্রতিনিয়ত আমাদের উন্নত করে, একজন অহংকারী মানুষের কখনোই নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা থাকে না। ফেসবুকের জনপ্রিয়তা আমার লাইফে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। যারা মনে করেন ফেসবুকে লাইক পাওয়াটাই আসল আর ওখানে লিখলেই লেখক হয়ে গেলো তার ফলাফল তারা কয়েক বছর পর টের পাবে। সস্তা গল্প দিয়ে লেখক হওয়া ব্যক্তিরা আগামী কিছু বছরের মধ্যেই হারিয়ে যাবে। সারা পৃথিবীতে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমছে । বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে । যারা ফেসবুক কেন্দ্রিক লেখালেখি করে তাদের বলবো তোমরা বাইরে আসো, বাইরে লেখালিখি করো। তোমাদের মেধাটাকে ভার্চুয়াল থেকে বের হয়ে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাও।
ওমেন্সকর্নার : এতো ব্যস্ত থেকেও আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
রুমানা বৈশাখী : ওমেন্সকর্নারকেও অনেক ধন্যবাদ।