রহস্যে ঘেরা এরিয়া ৫১

  • রাবেয়া আহমেদ স্বর্ণা 
  • জুলাই ৮, ২০১৮

এই পৃথিবীর চতুর কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে রহস্য। আর মানুষ জন্ম থেকেই রহস্যের প্রতি দূর্বল। এখনো পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে জনসাধারনের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তালিকাভুক্ত হাতে গোনা কিছু মানুষ ছাড়া কেউ সেখানে যেতে পারবে না।রহস্যে ঘেরা এসব জায়গায় কি কাজ করা হয় তার প্রতি সবার প্রবল আকর্ষন।

পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্টি দূর্লভ জায়গাগুলোর মধ্যে প্রথম কাতারেই থাকবে আমেরিকার নোভাডা অঙ্গরাজ্যের সামরিক স্থাপনা এরিয়া ৫১ যার আয়তন ২৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার এবং গ্রুম হ্রদের দক্ষিনাংশে অবস্থিত। দূর্ভেদ্য বেষ্টনিতে ঘেরা এই ঘাটির প্রবেশ পথে লেখা আছে "সংরক্ষিত এলাকার দিকে প্রবেশের চেষ্টা করলেই তাকে গুলি করা হবে।"এরিয়া ৫১ এর মূল গেট ঘাটি থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে অবস্থিত। এই গেটের কাছে বিশাল এক সাইন বোর্ডে বড় করে সতর্কবাণী সাইন জানায় যে "প্রবেশ নিষিদ্ধ" এবং "ফোটোগ্রাফি নিষিদ্ধ" এলাকা।

গোপন এই জায়গাটি গোটা দুনিয়ার নজরের বাইরে ছিল প্রায় কয়েক যুগ। সর্বপ্রথম ১৯৮৮ সালে একটি সোভিয়েত স্যাটেলাইট ছবি তুলে এরিয়া ৫১-এর।এরপর বিভিন্ন পাবলিকেশন এসব ছবি প্রকাশ করে দিলে বের হয়ে আসে থলের বিড়াল।শুধু স্যাটেলাইটের ছবিটুকুই প্রকাশিত হওয়া পর্যন্তই, এরিয়া ৫১-এর গোপনীয়তায় ছেদ পড়েনি বলতে গেলে এতটুকুও।স্যাটেলাইটে জায়গাটির অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর  অনেক রকমের তত্ত্ব, মতবাদ, গুজব, কল্পকথা, রহস্যময়তা, রহস্যময় যান ও অ্যালিয়েন প্রযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে নানান কিছু উঠে আসতে থাকে।


 

বিশাল এই এলাকা নিয়ে গঠিত অঞ্চলটিতে ঠিক কি রয়েছে জানা যায় না, তবে বলা হয় বিশাল এই অংশের আপনি যা দেখেন বা শুনেন তা এর সত্যিকার অবকাঠামোর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ।কোনো কোনো কন্সপিরেসি থিওরিস্টের মতে, এরিয়া ৫১ এ মাটির নিচে বিশাল বাঙ্কার গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। কারো মতে সেই বাঙ্কারগুলো ৪০ তলা ভবনের সমান উঁচু! আরো রয়েছে গোপন রেল লাইন যা লস অ্যালামস, হোয়াইট স্যান্ডস এবং লস এঞ্জেলেসের অন্যান্য গোপন অঞ্চলের সাথে যুক্ত!!স্যাটেলাইটের ছবি থেকে দেখা যায়,এরিয়া ৫১ এ সাতটি রানওয়ে আছে। তারমধ্য একটি ব্যবহার করা হয় না বা বন্ধ।আরও আছে হ্যালিপ্যাড। 

কি আছে এর ভেতর?কিইবা এমন কাজ করা হয় এখানে যার দরুন সেখানার তালিকাভুক্ত কর্মী ছাড়া আর কাউকেই ঢুকতে দেয়া হয় না? এরিয়া ৫১ এমন এক সামরিক ঘাটি যেখানকার কর্মীরা সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছে দায়বদ্ধ।এখানে আজ পর্যন্ত বেসামরিক কেউ ঢুকতে পারে নি।কেউ যদি ঢুকেও থাকে তাহলে বের হয়েছে লাশ হয়ে।

এরিয়া ৫১ এলাকাটি কে আমেরিকার সরকার এতোটাই গোপন করে রেখেছিল যে,আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বারবার অভিযোগ সত্বেও এর অস্তিত্ব স্বীকার করে নি ওয়াশিংটন।বিশ্বের কাছে এটি মার্কিন সরকারের এক বিশাল সামরিক বাহিনীর অপারেশন ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও অনেকে এটিকে "এরিয়া অফ কন্সপেরেসি" অথবা "ষড়যন্ত্রের এলাকা" বলে থাকে।

অবশেষে ১৮ই অগষ্ট ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো আমেরিকার সরকার এরিয়া ৫১ এর অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়। এই জায়গা টি নিয়ে অনেকের অনেক জল্পনা কল্পনা আছে,আছে অনেক বিতর্কও।আশেপাশের এলাকার অনেক অধিবাসীই বলে থাকেন এই স্থানটিতে ভিনগ্রহের প্রানীদের কাল্পনিক যান "ফ্লাইং সসার" উড়তে দেখা যায়।সম্ভবত এরিয়া ৫১-এর সাথে জড়িত সবচেয়ে জনপ্রিয় তত্ত্বটি অ্যালিয়েন ও ভিনগ্রহের যান সংক্রান্ত। অনেকেই বিশ্বাস করেন- নিউমেক্সিকোর রসওয়েলে একটি অ্যালিয়েন স্পেস ক্র্যাফট ধ্বংস্প্রাপ্ত হয়, যার ভগ্নাংশ ও অ্যালিয়েনের দেহাবশেষ পরীক্ষা ও গবেষণার জন্যে সরকার অতি গোপনে চালান করে এরিয়া ৫১-এ। 

এই তত্ত্ব থেকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে কেউ কেউ দাবি করে এরিয়া ৫১-এর ভেতরে জীবিত অ্যালিয়েন ও অ্যালিয়েনদের স্পেস ক্রাফট রয়েছে।তাদের ধারণা মাটির নিচে অনেক সুরঙ্গ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে তারা অন্যান্য গোপন জায়গার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। এই তত্ত্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর দাবিটি হলো, আসলে এরিয়া ৫১-এর পেছনের মূল হোতা অ্যালিয়েনরা এবং তারা চেষ্টা করছে অ্যালিয়েন-মানুষ হাইব্রিড জাত তৈরি করতে।

১৯৪৭ সালের জুলাই তে ওয়াশিংটনের উপর দিয়ে একটি ইউএফও (Unidentified Flying Object) দেখতে পাওয়ার দাবি করা হয়। 
এছাড়া চাঁদে যাওয়ার যে দৃশ্য টিভিতে দেখানো হয়েছিল তাও এই এরিয়া ৫১ এ ধারন করা হয়েছিল বলে বিতর্ক আছে।কিন্তু সাধারনের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় এই বিতর্কের কূল-কিনারা আজ পর্যন্ত হয় নি।

এরিয়া ৫১ নিয়ে যত তত্ত্বই উঠে আসুক না কেন,নিরপেক্ষভাবে তা প্রমান করা প্রায় একরকম অসম্ভব! কেননা এরিয়া ৫১-এর ভেতরকার কর্মকান্ডের গোপনীয়তা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখছে।তবে এরিয়া ৫১ নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্বের ব্যপারে সবশেষে একটি কথা বললে বোধহয় বাহুল্য হবে না- যা রটে,তার কিছু হলেও তো ঘটে!

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।

 

Leave a Comment