রহস্যময়ী মোনা লিসা‍‍`র পাঁচ রহস্য

  • রোজী আরেফিন
  • আগস্ট ৪, ২০১৯

ভুবন মোহিনী এক লাস্যময়ী হাসি দিয়ে সারা দুনিয়ার আপামর জনতাকে এক রহস্যের মায়ায় আবদ্ধ করে রেখেছে যে অভূতপূর্ব নারী, সেই হলো লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির বিখ্যাত নারী চিত্রকর্ম 'মোনা লিসা'। কি আছে এই মোনালিসা চিত্রকর্মে?কেন এটি এত বিখ্যাত আর কেনই বা এই চিত্রকর্ম টি নিয়ে সারা দুনিয়ায় এত সোর গোল আর এত গবেষণা?

ধারণা করা হয়, লা গিওকোন্ডা নামে পরিচিত মোনা লিসা  ফ্রান্সিসকো ডেল জিওকোন্ডোর প্রিয় স্ত্রীর একটি চিত্রকর্ম।ফ্রান্সিসকো ডেল জিওকোন্ডোর তৎকালিন ইতালিতে ডিউক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং লিওনার্দো এই ডিউকের অধীনস্থ এক কর্মচারী ছিলেন। মোনা লিসার এই পেইন্টিংটি কাঠের টুকরোর উপরে তৈলরং দিয়ে আঁকা হয়। মূল পেইন্টিংটি আকারে ৭৭/৫৩ সেমি এবং এটি বর্তমানে রয়েছে ফ্রান্সের প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে।

মূলত মোনা লিসার চিত্রে মোনা লিসার এক রহস্যময় অভিব্যক্তি(একই সাথে আকর্ষণীয় এবং অপ্রত্যাশিত)চিত্রটিকে সর্বজনীন খ্যাতি প্রদান করেছে। চলুন পাঠক, মোনা লিসা চিত্রের পাঁচটি গোপন রহস্য আমরা আজকে জেনে নিই।

১.মোনা লিসা তার নাম নয়ঃ পেইন্টিং এর নারীটিকে সাধারণত লিসা গেরার্ডিনি বলে মনে করা হয়, যার ধনী স্বামী ফ্রান্সেসকো ডেল জিওকোন্ডো ইতালির ফ্লোরেন্সে ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে সম্ভবত ওখানের ডিউক ছিলেন।মোনা লিসা (অথবা মোননা লিসা, ইতালীয়রা বলতে পছন্দ করে) মোটামুটি অনুবাদ করে দাঁড়ায়  "মাই লেডি লিসা"।  যাই হোক,লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কখনোই চিত্রটি শেষ করে যেতে পারেননি, ১৫১৯ সালে যখন তিনি মারা যান, চিত্রটি তার সহকারীর কাছে অসমাপ্ত অবস্থায় ছিলো।

২.চিত্রকর্মটি পেইন্টিং কিন্তু ক্যানভাসে নয়ঃ দ্যা ভিঞ্চির এই বিখ্যাত চিত্রটি একটি পপলার প্যাঙ্কে আঁকা।ভেজা প্লাস্টারে বড় কাজ আঁকতে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন বলে যারা মনে করেন, কাঠের প্যাঙ্কটি ও কিন্তু তাদের কাছে অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছে না। আসলে চৌদ্দতম শতাব্দীর পর থেকে ক্যানভাস শিল্পীদের জন্য উপলব্ধ ছিল এটা ঠিক, কিন্তু তৎকালীন অনেক নামকরা চিত্রশিল্পী ই তাদের ছোট্ট শিল্পকর্মের জন্য একটি কাঠের টুকরোকে ও পছন্দ করতে দ্বিধাবোধ করতেন না।

৩.লুকানো সিক্রেট কোডঃ ২০১০ সালে ইতালির জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কমিটির সভাপতি সিলভানো ভিনসেটি দাবি করেছিলেন যে, মোনা লিসার চোখগুলিতে সূক্ষ্মভাবে আঁকা অক্ষরগুলি কে তিনি চিহ্নিত করেছেন: বাম চোখে,এল এবং ভি (সম্ভবত লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নামের প্রথম অংশ )এবং ডান চোখে সম্ভবত সি, ই বা বি।

৪. মোনা লিসার হাসিঃ ২০০০ সালে, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা মোনা লিসার হাসির জন্য কিছু নিউরোলজিকাল ব্যাখ্যা পেশ করেছিলেন।  যখন একজন দর্শক তার চোখ দেখে, তখন মুখটি পেরিফেরাল দৃষ্টি, যা কালো এবং সাদা দেখায়। তখন মনে হয় মোনা লিসা বেশী হাসছে কিন্তু যত তাড়াতাড়ি আপনি সরাসরি তাকান আস্তে আস্তে মোনা লিসার হাসি ও হ্রাস পেতে থাকে। আবার যখন দর্শক তার ঠোঁটের দিকে তাকায় তখন মনে হয় মোনা লিসার হাসিটা কত অপ্রতিরোধ্য এবং কত রহস্যময়। এই যে আপনার তাকানোর পরিপ্রেক্ষিতে  তার হাসির অবস্থার পরিবর্তন এটিই আজ পর্যন্ত  রহস্যময় হয়ে আছে সবার কাছে।

৫.অজানা সেতুঃ মোনা লিসার ব্যাকগ্রাউন্ড আড়াআড়ি এক সেতুর উপস্থিতি আবিষ্কার করা গেছে মনে হচ্ছে, কিন্তু সেতু টিকে হয়তো লিওনার্দো  জানত। এটি সাধারণত টাস্ক্যানিতে পোন্ত বুরিয়ানো বলে মনে করা হয়, তবে ২০১১ সালে একজন গবেষক দাবি করেছিলেন যে এটি ১৪২৭ সালের বন্যায় ভেসে যাওয়া ট্রবিবিয়াতে ববিবিও সেতুটি ও চিত্রকর্মের ব্রিজের ন্যায় দেখায়। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রিজের ব্রাশস্ট্রোকগুলিতে সম্ভবত ৭২ নম্বরের সংখ্যাটি দেখা যেতে পারে।

ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

ধন্যবাদ। 

Leave a Comment