একমাস রোজা রাখলে শরীরে কী ধরণের পরিবর্তন ঘটে?

  • ওমেন্স কর্নার
  • এপ্রিল ৯, ২০২৩

রমজানের রোজা ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের একটি। সব সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এক মাসের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। রোজা রাখা অবস্থায় খাদ্য, পানি, পানীয়, ধূমপান ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকার নিয়ম আছে ইসলামে।

জানলে অবাক হবেন, শুধু ধর্মীয় রীতি অনুসারেই বরং রোজা রাখার বৈজ্ঞানিক অনেক সুফল আছে। রমজানে একমাস রোজায় শরীরে অনেক শারীরবৃত্তীয়, জৈব রাসায়নিক, বিপাকীয় ও আধ্যাত্মিক পরিবর্তন ঘটে।

গবেষণায় দেখা গেছে, রমজানের প্রথম কয়েকদিনে রক্তে শর্করার মাত্রা ও রক্তচাপ উভয়ই কমে যায়। শরীর পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া শুরু হয় ও প্রথম কয়েক দিন সবচেয়ে কঠিন। কারণ এ সময় সাধারণত মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ও তীব্র ক্ষুধা লাগার সমস্যা দেখা দেয়।

আরো পড়ুন: আলু খেলে কমবে ওজন, কিন্তু কিভাবে? 

রমজানের প্রথম সপ্তাহের পর শরীর উপবাসের সময়সূচির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করে ও পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম নিতে সক্ষম হয়। পাচনতন্ত্র শরীরের শ্বেত রক্তকণিকাগুলো আরও সক্রিয় করতে সাহায্য করে।

একই সঙ্গে শরীরকে আরও পরিষ্কার করে, নতুন কোষ গঠন করে এবং শক্তি জোগায়। এ পর্যায়ে অঙ্গগুলোও তাদের মেরামত প্রক্রিয়া শুরু করে।

অর্ধেক রমজানের পর থেকে শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এ সময় মন-মেজাজ ভালো থাকে ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বাড়তে শুরু করে। এ পর্যায়ে কোলন, লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও ত্বকের টক্সিন দূর করে ডিটক্সিং করে।

রমজানের শেষের ১০ দিনে শরীর রোজায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে আপনি আরও উদ্যমী হয়ে পড়বেন। উন্নত স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতাও থাকবে।

এ সময় অঙ্গগুলো তাদের নিরাময় প্রক্রিয়া শেষ করে ও একবার সব টক্সিন অপসারণ হয়ে গেলে, শরীর তার সর্বোচ্চ ক্ষমতায় কাজ করতে সক্ষম হয়।

আরো পড়ুন: আলু বেশি খাওয়া ভালো, নাকি খারাপ?

রমজানের রোজা লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি), শ্বেত রক্ত কণিকা (ডাব্লিউবিসি), প্লাটিলেট (পিএলটি) গণনা, উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল (এইচডিএল-সি) বাড়ায়।

অন্যদিকে রক্তের কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস, নিম্ন ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল (এলডিএল-সি) কমায় ও লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল (ভিএলডিএল-সি) ঘনত্বও কমায়।

তাছাড়া এটি শরীরের ওজন, কোমরের পরিধি, বডি মাস ইনডেক্স, শরীরের চর্বি, রক্তের গ্লুকোজ, সিস্টোলিক, ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ও উদ্বেগের মাত্রা।

দীর্ঘ একমাস রোজা রাখলে প্রদাহ, প্রো-ইনফ্লেমেটরি সাইটোকাইনস আইএল-১বি, আইএল-১বি, আইএল-৬, টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর এ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

আরো পড়ুন: ম্যানোপসের সাথে রক্তস্বল্পতার সম্পর্ক আছে কী?

সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্ক, হার্ট, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, হেমাটোলজিক, এন্ডোক্রাইন প্রোফাইল ও জ্ঞানীয় ফাংশনের উন্নতি ঘটে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রমজানের রোজা রাখার কোনো বিরূপ প্রভাব নেই।

রোজা রাখার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমানো যায়, যা স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য একটি স্বাস্থ্যকর নন-ফার্মাকোলজিক্যাল উপায়।

যদিও রমজানের রোজা সব সুস্থ ব্যক্তির জন্য নিরাপদ। তবে যাদের ডায়াবেটিস মেলিটাস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, কিডনি ও চোখের রোগের মতো বিভিন্ন অসুখ আছে; তাদের উচিত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই রোজা রাখা।

রোজা রাখার অতিরিক্ত ৬ সুবিধা:

১. সপ্তাহে দুদিন রোজা রাখলে আলঝেইমার ও পারকিনসন্স ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

২. একজনের খাদ্যের পরিবর্তন মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মতে, অতিরিক্ত খাওয়া হলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমতে শুরু করে।

৩. রোজা রাখলে মস্তিষ্ক আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে ও প্রোটিন উৎপাদন বাড়ায়। ফলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে।

আরো পড়ুন: পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া ক্যাপসি শাহী পনির রেসিপি। 

৪. নিয়মিত রোজা রাখা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও বাড়ায়।

৫. ২০০৭ সালের এক গবেষণা বলছে, রোজা ক্যানসারের পাশাপাশি কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমানোর একটি কার্যকর উপায়।

৬. নিয়মিত রোজা রাখলে কমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।

সূত্র: হেলথ লাইন, পাবমেড, আই লাভ কাতার

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment