ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস! যার কারনে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে!

  • তাশফিয়া আমিন 
  • অক্টোবর ২৩, ২০১৮

শরীরের গভীর শিরা গুলোর যে কোন একটিতে রক্ত জমাট বেধে যাওয়াকে বলা হয় ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস(deep vein thrombosis – DVT)। ইংরেজিতে সংক্ষেপে বলা হয় DVT।এটি সাধারণত পায়ের ভিতরের দিকে একটি শিরায় হয়। যে শিরাটি পায়ের গোছার মাংসপেশী (calf muscle) হয়ে উরুর মাংসপেশীর ভিতর দিয়ে উপরে উঠে যায় সেই শিরায় হয়। এর কারনে পায়ে ব্যথা হয়, ফুলে যায়। সবচেয়ে বিপদজনক হলো এর থেকে পালমোনারি এম্বোলিজম (pulmonary embolism) হতে পারে, যার কারনে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

কাদের ঝুঁকি বেশি?

যে কারোরই এটা হতে পারে, তবে বয়সের সাথে সাথে এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঝুঁকির মধ্যে আরো যা রয়েছেঃ

* গর্ভাবস্থা এবং সন্তান জন্মের পর ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় (puerperium)।

* যদি পূর্বে কখন থ্রম্বোএম্বোলিজম (thromboembolism) হয়ে থাকে (শিরায় জমাট বাধা রক্ত যখন সেখান থেকে ছুটে গিয়ে, রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোণ সরু রক্তনালীতে আটকে যায় এবং সেই রক্তনালীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেটাকে থ্রম্বোএম্বোলিজম বলে)।

* ওজন বেশি অর্থাৎ স্থূলকায় হলে।

* হার্ট ফেইলর (heart failure) বা ক্যান্সার থাকলে।

*দীর্ঘ দিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হলে, যেমন, কোন অপারেশনের পর বা এমন অসুস্থতা যার কারনে শয্যাশায়ী থাকতে হয়।

প্রসবের সময় যেন রক্তক্ষরন কম হয়, তার প্রস্তুতি হিসাবে শরীর গর্ভাবস্থাতেই রক্তের জমাট বাধার প্রবনতা বৃদ্ধি করতে থাকে। যার কারনে গর্ভাবস্থায় DVT হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। প্রতি ১০০০ জনে ১ জন গর্ভবতী মেয়ের তার গর্ভাবস্থার কোন একটা পর্যায়ে DVT হওয়ার সম্ভবনা থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে DVT এর কোন চিহ্ন বা লক্ষন থাকে না। যে লক্ষন গুলো দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন সেগুলো হলোঃ

*যে কোন এক পায়ে, বিশেষ করে পায়ের গোছার মাংশপেশীর কাছে যদি ফোলা, ব্যথা এবং চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হয়, এবং দাঁড়িয়ে থেকে হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতা উরুর দিকে তুললে যদি ব্যথা বেড়ে যায়।

* আক্রান্ত স্থানে যদি তীব্র ব্যথা হয়।

* আক্রান্ত স্থানের ত্বক যদি গরম হয়ে থাকে।

*আক্রান্ত স্থান বিশেষ করে পায়ের পিছন দিকে গোছার মাংশপেশীর স্থানটি যদি লাল হয়ে ফুলে উঠে।

DVT-এর ঠিকমত চিকিৎসা না হলে এর থেকে পালমোনারি এম্বোলিজম (pulmonary embolism) হতে পারে। DVT-এর জমাট বাধা রক্ত যখন সেখান থেকে ছুটে গিয়ে, রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে শ্বাসতন্ত্রের প্রধান শিরা বা কোন শাখা শিরায় আটকে যায় এবং সেই রক্তনালীতে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়, তখন সেটাকে পালমোনারি এম্বোলিজম বলে। যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে।

DVT প্রতিরোধে করনীয়ঃ  এক্ষেত্রে অনেক কিছুই করার আছে। ধূমপান বন্ধ করুন। স্থূলকায় হয়ে থাকলে ওজন কমান। নিয়মিত হাঁটুন , হাঁটলে রক্ত চলাচল ভাল থাকে ফলে রক্ত জমাট বাধতে পারে না। যদি আপনার DVT হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তবে ডাক্তার হয়তো আপনাকে ‘রক্ত জমাট বাধতে বাধা দেয়’ এমন ওষুধ খেতে বলবেন, বিশেষ ধরনের মোজা পরতে বলবেন। যদি লম্বা সময়ের জন্য ভ্রমন করতে হয়, প্রচুর পানি পান করুন, মাঝে মাঝে হাঁটু সোজা করে এবং ভাজ করে ব্যায়াম করুন, যখনই সুযোগ হয় উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করুন।

Leave a Comment