বাঙালি মহিলা কবি কুসুমকুমারী দাশ

  • কবিতা আক্তার
  • আগস্ট ১০, ২০২১

কুসুমকুমারী দাশ একজন মহিলা কবি। তাঁর রচিত "আদর্শ ছেলে", যার প্রথম চরণ" আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে", বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সর্বাধিক পরিচিত।

কবির জ্যেষ্ঠপুত্র জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এবং জনপ্রিয় কবি। তিনি খুব বেশি লিখে যান নি কিন্তু যেটুকু রেখে গেছেন তাতে তার প্রতিভার ছাপ সুস্পষ্ট। তারপরও কুসুমকুমারী দাশের প্রতিভার মূল্যায়ন করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

আরো পড়ুনঃ ছেলে দুঃখ নিয়ে বলে! আমি কার বউয়ের, নাকি মায়ের?

কুসুমকুমারী দাশ ১৮৭৫ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা চন্দ্র নাথ দাশ আর মাতা ধনমণি দাশ। চন্দ্র নাথ দাশ কবিতা লিখতেন। কুসুমকুমারী দাশ জন্মসূত্রে লেখার ক্ষমতা পেয়েছিলেন যেমন পেয়েছিলেন তার সুযোগ্য পুত্র জীবনানন্দ দাশ।

ছোটবেলা থেকেই কুসুমকুমারী প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তার কবিতা নিয়মিতভাবে ছাপা হতে থাকে। মুকুল, ব্রহ্মবাদী, প্রবাসী প্রমুখ পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হতো। বিভিন্ন পত্রিকা কবির বাসায় আসতো। তবে অগোছালো স্বভাবের কারণে সেগুলো প্রায়ই খুঁজে পাওয়া কঠিন হতো।

কুসুমকুমারী কলকাতার বিখ্যাত বেথুন স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তখন তার বয়স ছিল ১৯। স্বামীর নাম ছিল সত্যানন্দ দাশ। কুসুমকুমারী সন্তানদের নাম রেখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ, অশোকানন্দ দাশ এবং সুচরিতা দাশ। এদের মধ্যে পরবর্তীকালে জীবনানন্দ দাশ খুব নাম করেছিলেন। কুসুমকুমারী দাশ শুধু একজন কবি ছিলেন তা নয়।

আরো পড়ুনঃ খালি পেটে যে সব খাবার খাবেন না

তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। নিপুণভাবে গৃহকর্ম সম্পন্ন করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজ করতেন। ব্রাহ্মসমাজের মহিলা সদস্য ছিলেন তিনি। কুসুমকুমারী বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন মহিলাকে স্বাবলম্বী হতে এবং মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে শিখিয়েছিলেন। কবে নেতৃত্ব দিতে পারতেন।

বাংলা ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ পর্যন্ত তিনি ব্রাহ্মসমাজের অধ্যাত্মিক নেতার দায়িত্ব পালন করেন। কুসুমকুমারী দাশ বরিশাল মহিলা সমাজের সভানেত্রীও ছিলেন। আসলে নানাগুণের সমাবেশ ঘটেছিল তার মধ্যে। কুসুমকুমারী দাশ বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন।

এসবের মধ্যে আছে কাব্য কুমারী, পৌরাণিক আখ্যায়িকা, কুসুমকুমারী দাশের কবিতা এবং দৈনন্দিন দিনলিপি। এসব লেখায় তার মুন্সিয়ানা সহজেই চোখে পরে। তার কবিতায় বারবার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ।

কাব্য মুকুল (১৮৯৬) তার কাব্যগ্রন্থ। 'পৌরাণিক আখ্যায়িকা' গদ্য গ্রন্থ। "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে"। কবি কুসুমকুমারী দাশের এই কবিতা পড়েনি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুনঃ রুক্ষ চুলকে করুন চকচকে ঝলমলে

মা কুসুমকুমারী দাশ সম্বন্ধে এক নিবন্ধে জীবনন্দদাস লিখেছেন, "আমার মা শ্রীযুক্তা কুসুমকুমারী দাশ বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার বেথুন স্কুলে পড়েছিলেন। খুব সম্ভব ফাস্ট ক্লাস অবধি পড়েছিলেন, তার পরেই তার বিয়ে হয়ে যায়।

তিনি অনায়াসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষায় খুব ভালই করতে পারতেন, এ বিষয়ে সন্তানদের চেয়ে তার বেশি শক্তি ছিল মনে হচ্ছে"। (আমার মা বাবা)

বিপদ আসিলে কাছে, হও আগুয়ান,

নাই কি শরীরে তবে রক্ত মাংস প্রাণ?

হাত পা সবারি আছে, মিছে কেন ভয়,

চেতনা রয়ে যায়, সেকি পড়ে রয়?

এই কবিতায় বলে দেয় তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। কুসুমকুমারী দাশ প্রবন্ধ লিখে স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ

১৯৪৮ সালে কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউ তে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অনেক গুণী এই কবির কথা বাংলা সাহিত্য অনেকদিন মনে রাখবে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment