গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়ার লক্ষণ!

  • রেজবুল ইসলাম 
  • ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮

বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী রক্তের লোহিত কণিকায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিমোগ্লোবিনের চেয়ে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ার অবস্থাকে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া বলে। সাধারণত গর্ভবতী মা ও নারীরা রক্তশূন্যতায় বেশি আক্রান্ত হয়। রক্তশূন্যতা কখনো কখনো মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে। গর্ভাবস্থায় অন্য কোনও জটিলতা ছাড়াই মায়ের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়৷ কারণ এই সময়ে রক্তের প্লাজমার মাত্রা বেড়ে গেলেও সেই তুলনায় লোহিতকণিকার পরিমাণ বাড়ে না৷ শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে রক্তে লোহিতকণিকার ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি প্রয়োজন৷ 

এই পরিমাণ লোহিতকণিকা তৈরি করতে শরীরের প্রচুর বাড়তি পরিমাণ ফলিক এসিড ও আয়রন প্রয়োজন হয়৷ দৈনিক আহার বা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে না পেলে শরীরে জমানো আয়রন ও ফলিক এসিড ব্যবহার করে লোহিতকণিকা তৈরি করে৷ ফলে শরীরে এসব উপাদানের অভাবে অ্যানিমিয়া হয়৷ চিকিৎসকেরা গর্ভাবস্থায় রোগীদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১০ থেকে ১১ শতাংশ রাখার চেষ্টা করেন৷পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১৩০ থেকে ১৮০ গ্রাম/লিটার আর মহিলাদের ক্ষেত্রে ১১৫ থেকে ১৬৫ গ্রাম/লিটার। পুরুষ কিংবা মহিলা যে কারও ক্ষেত্রেই, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম/লিটার হয়, তবে এটা মারাত্মক অ্যানিমিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে একই রোগে ভুগছেন, গর্ভবতী মহিলা, ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে, কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে, লৌহ, ফলেট ও ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ খাবার কম খেলে এবং কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের রক্তশূন্যতার ঝুঁকি বেশি থাকে।

লক্ষণঃ 

(১) মুখ ও চোখ ফ্যাকাশে দেখায়, চোখের নিচের পাতার ভেতরের দিকটা সাদা হয়ে যায়৷

(২) দুর্বলতা, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঝিমঝিম করা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, কাজ কর্মে অনীহা, অনিদ্রা, অল্পে মনোযোগ নষ্ট হওয়া।

(৩) জিহ্বা ঠোঁট মসৃণ ও সাদাটে হয়ে যাওয়া, মুখের কোণায় ও জিহ্বায় ঘা হওয়া, নখে ভঙ্গুরতা বা চামচের মতো গর্ত হওয়া, অরুচি, বমিবমি ভাব ও হজমে ব্যাঘাত ঘটা।

(৪) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়৷

(৫) ধীরে ধীরে রক্তাল্পতা বাড়লে সে ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব কমে না গেলে লক্ষণ সঠিক ভাবে বোঝা যায় না৷

(৬) শিশুর কাজকর্ম করতে ক্লান্তি বোধ করা। রাত্রিজাগরণে ক্লান্তি।

প্রতিকার : খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনেও রক্তশূন্যতা দূর করা যায়। শরীর দুর্বল হলে বা ফ্যাকাসে হলেই অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেরাই আয়রন সিরাপ বা ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। এতে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে।  এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা একটি প্রচলিত সমস্যা। শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তশূন্যতা হয়। সাধারণত মেয়েরা এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন। দুর্বল লাগা, বমি বমি ভাব হওয়া, সারাদিন ঘুমঘুম লাগা এবং চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সবই রক্তশূন্যতার লক্ষণ। থ্যালাসেমিয়া রোগে রক্তশূন্যতা হয় ঠিকই কিন্তু শরীরে আয়রনের অভাব হয় না। বরং আয়রন জমা হয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে রক্তের প্রয়োজন হয়। যেকোনো ঔষধ প্রয়োজন হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।

Leave a Comment