নবজাতকের নাভিরজ্জু বা নাড়ি কী ? না জানলে জেনে নিন এখনই 

  • রেজবুল ইসলাম 
  • মার্চ ২৮, ২০১৮

নাভিরজ্জু বা নাড়ি : নাভিরজ্জু গর্ভস্থ বাচ্চাকে তার মায়ের সাথে যুক্ত রাখে। এই নাভীরজ্জুর একপ্রান্ত জরায়ুর ভিতরের গায়ে আটকে থাকা গর্ভফুলের সাথে এবং অপরপ্রান্ত গর্ভস্থ শিশুর নাভীর সাথে সংযুক্ত থাকে। একটি নাভীরজ্জু গড়ে ৫০ সে.মি. বা ২০ ইঞ্চির মত লম্বা হয়ে থাকে।

নাভীরজ্জু যে কাজ গুলো করে থাকে : গর্ভস্থ বাচ্চার জন্য অক্সিজেন এবং খাদ্য সরবরাহের কাজে এই নাভিরজ্জু ব্যবহার হয়ে থাকে। আপনার শরীরের প্রবাহিত রক্ত থেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং অক্সিজেন নাভীরজ্জুর মাধ্যমে বাচ্চা গ্রহন করে থাকে। একই ভাবে গর্ভস্থ বাচ্চা যে বর্জ্য এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে থাকে তাও এই নাভিরজ্জুর মাধ্যমে মায়ের শরীর হয়ে নির্গত হয়। নাভিরজ্জুর ভিতরে রক্ত চলাচল যেভাবে হয়ে থাকে –

•    একটি ধমনীর মাধ্যমে অক্সিজেন এবং এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সহ রক্ত আপনার শরীর থেকে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করে।

•    দুটি শিরার মাধ্যমে বাচ্চার দুষিত রক্ত এবং বর্জ্য গর্ভফুলের দিকে ফিরে আসে

নাভিরজ্জুর ভেতরে রক্তনালীর চারপাশে এক প্রকার চটচটে পদার্থ থাকে যা রক্তনালীকে সুুরুক্ষিত থাকে। এই চটচটে পদার্থকে ওয়ারটন’স জেলী বলা হয় , এই জেলী একধরনের পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে যার নাম এম্নিওন। আপনার গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকে গর্ভফুল থেকে নাভিসজ্জুর মাধ্যমে বাচ্চার শরীরে এন্টিবডি প্রবাহিত হয় । এই এন্টিবডি আপনার বাচ্চাকে জন্মের পর তিন মাস পর্যন্ত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে থাকে এবং সকল প্রকার সংক্রমন থেকে রক্ষা করে। তবে, আপনার নিজের শরীরে যে এন্টিবডি আছে শুধু তাই আপনার বাচচআর শরীরে যায়।

বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হবার পরে এই নাভিরজ্জুর কি হয়? জন্মদানের পরেই আপনার ডাক্তার যা করবে –

•    একটি প্লাস্টিক ক্লিপ দিয়ে বাচ্চার নাভি থেকে দুই আঙ্গুল ব্যাবধানে নাভিরজ্জু আটকে দিবে।

•    প্রথম ক্লিপ থেকে আরো এক আঙ্গুল ব্যবধানে আরেকটা ক্লিপ দিয়ে নাভিরজ্জু আটকে দিবে।

•    দুইদিকে আটকানো ক্লিপের মধ্যখান দিয়ে নাভিরজ্জুটি কেটে দেয়া হবে। আপনার বাচ্চার নাভির সাথে দুই থেকে তিন সে.মি. অবশিষ্ট কাটা নাভিরজ্জু থেকে যাবে।

নাভিরজ্জুতে কোন নার্ভ থাকে না ফলে আপনি বা আপনার বাচ্চা এটি কেটে ফেলার সময় কোন ব্যাথা অনুভব করবেন না। নাভিরজ্জু কাটার আগইে আপনি চাইলে আপনার শিশুকে আপনার সামনে আনার জন্য বলতে পারেন। আপনার বাচ্চার জন্মের ৫ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই নাভিতে রয়ে যাওয়া কাটা নাভিরজ্জু শুকিয়ে কালো হয়ে যাবে এবং খসে পরবে । সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন সময় নিবে বাচ্চার নাভি পুরো মাত্রায় শুকিয়ে একদম সুস্থ্য হয়ে উঠতে । এই সময়টাতে নাভির জায়গাটা শুকনো এবং পরিস্কার রাখতে হবে যেন কোন সংক্রমন না হয়।

যে ধরণের জটিলতা তৈরি হতে পারে।

 - যদি আপনার বাচ্চার নাভি থেকে কোন রকম রক্ত বা পুঁজ নির্গত হতে দেখেন তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

- বাচ্চার জন্মের পর নাভিরজ্জু থেকে রক্তের সেম্পল নেয়া হয় র‌্যাসাস টাইপ অর্থাৎ রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার জন্য।

- মাঝে মাঝে দেখা যায় নাভিরজ্জুতে কেবল একটি কেন্দ্রীয় ধমনী থাকে। ০.২ থেকে ১ শতাংশ গর্ভধারণে এমন হতে দেখা যায়। এর কারণ এখনো অজানা। গর্ভকালীন সময়ে নাড়িতে একটি মাত্র ধমনীই গর্ভস্থ বাচ্চাকে সহায়তা করতে পারে এবং এটির ফলে কোন সমস্যা হবেই এমন ধরে নেয়ার কিছু নেই। তবে, এটি পরবর্তীতে বাচ্চার হার্ট, কিডনী এবং হাড়ের সমস্যা তৈরি করতে পারে।


 

Leave a Comment