আমার কোনো মেয়ে নাই! কিন্তু আমার তো মেয়ে আছে!

  • ফারজানা আক্তার 
  • মে ২০, ২০১৮

হেডলাইনটা কেমন কনফিউজিং, তাই না? হেডলাইনের প্রথম অংশে আছে আমার কোনো মেয়ে নেই, দ্বিতীয় অংশে আছে কিন্তু আমার তো মেয়ে আছে! আসলে এই হেডলাইনটা দুইটা মানুষের মুখের দুইটা বাক্য। একজনের মেয়ে আছে, অন্যজনের মেয়ে নেই। একজনের মেয়ে না থাকতেই পারে সেটা আবার হেডলাইন হয় নাকি? আবার, একজনের মেয়ে থাকতেই পারে সেটাও আবার হেডলাইন হয় নাকি? আপনাদের মনে যে সকল প্রশ্ন জগতে পারে, সে সবকয়টার উত্তর দিচ্ছি লেখার পরের অংশে। 

রিটা বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসকারী একজন মা। আমি যখন বৃদ্ধাশ্রমে দেখা করতে গেলাম রিটার রুমে ঢুকার সাথে সাথেই তিনি আমাকে ডেকে তার খাটে বসতে বললেন। তিনি শুয়ে ছিলেন আমাকে বসার জায়গা করে দিতে তিনি উঠে বসলেন। সকালে কি খেয়েছে, দুপুর হয়ে গেছে গোসল করেছে কিনা সেসব গল্প করছিলাম রিটার সাথে। রিটাও আমাকে নানা ধরণের প্রশ্ন করছিলো। দুইজন গল্প করছিলাম আর মাঝে মাঝে হেসে উঠছিলাম। হঠাৎ রিটা আমার কাঁধে হাত রেখে বলে, 'আমার কোনো মেয়ে নেই। তুমি কি আমার মেয়ে হবা?' আমি কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে রইলাম, তারপর কনফিউজিং মন বললাম, "আমাকে আপনার মেয়ে হিসেবে ভালো লেগেছে?" রিটা বললো, 'হ্যাঁ! তোমার সাথে গল্প করতে আমার ভালো লাগছে। এখানে তো অনেকেই আসে, সবার সাথে কথা বলতে হয় বলে বলি কিন্তু তোমার সাথে কথা বলতে আমার ভালো লাগছে। ' 

আমি বললাম, 'আজকে থেকে আমিই আপনার মেয়ে। চলেন এখন আমরা আরো গল্প করি। ' রিটার সাথে আমি আরো নানা রকম যখন কথা বলছি, তখন পাশ থেকে সুমনা বললো, " আমার তো মেয়ে আছে, কিন্তু তারা আমার খোঁজ খবর নেয় না, আমি জানিও না তারা এখন কোথায় আছে, কি করছে! " সুমনা বলেই কেঁদে দিলো। আমি রিটার পাশ থেকে উঠে গিয়ে সুমনার পাশে বসলাম। সুমনার কাঁধে হাত রেখে বললাম, "আমি আপনারও মেয়ে। এরপর থেকে আমিই আপনাদের খোঁজ খবর নিবো। কান্না বন্ধ করে এবার হাসুন তো!" 

সেখানে আমি ২-৩ঘন্টার মতো ছিলাম। যতক্ষণ ছিলাম তাদের সাথে কথা বলেছি, গল্প করেছি। আসার সময় তারা আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো আমি আবার কবে যাবো? বলেছি ২-৩দিন পরই আমি আসবো আবার। রিটা হাতের আঙ্গুল গুনে গুনে হিসাব করছিলো ২-৩দিন মানে কতদিন! এই দৃশ্যটা আমি হয়তো আমার জীবনে ভুলতে পারবো না। তারা আমাকে বলেছে সবাই নাকি আবার আসবো বলেই চলে যায়। পরে তারা আর যায় না। আমি বলেছি আমি বেঁচে থাকলে আবার আসবো। 

ইমোশন আর বাস্তবতা মধ্যে বিস্তর ফারাক। ইমোশনালি আমরা অনেক কথায় বলে ফেলি, কিন্তু বাস্তবে সেটা কার্যকর করা বড়ই কঠিন। আমি যদি বেঁচে থাকি এবং সুস্থ থাকি, আমি অবশই যাবো। কিন্তু আমি যে তাদের মেয়ে হলাম, বা তারা আমাকে মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করলো আমি সেই মেয়ের দায়িত্ব কতটুকু পালন করতে পারবো? এই চিন্তাটা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। মুখের কথায় মেয়ে তো হয়ে গেলাম, এখন কাজের মাধ্যমে কতটা দায়িত্ব পালন করতে পারবো? পারবো কি আমি!  

Leave a Comment