হিলারি ক্লিনটন! সব বাধা ঠেলে এগিয়ে চলা এক নারীর গল্প 

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯

হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন (Hillary Rodham Clinton) একজন মার্কিন রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন পররাষ্ট্রসচিব। হিলারী ক্লিনটন ইলিনয় রাজ্যের শিকাগোতে ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য, এবং নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার সিনেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। হিলারি ক্লিনটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের স্ত্রী। তিনি ১৯৯৪-২০০১ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা ছিলেন।  ১৯৬৯ সালে ওয়েলেসলি কলেজের সিনিয়র ক্লাস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। একই বছর কলেজের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে বক্তৃতা দিতে তাকেই বাছাই করেন সহপাঠীরা। কলেজে পড়ার সময় হিলারি একবার লাইফ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও স্থান পেয়েছিলেন।

এরপরই হিলারি যোগ দেন ইয়েল ল স্কুলে। আইনের সেই স্কুলের লাইব্রেরিতেই ভবিষ্যৎ স্বামী বিল ক্লিনটনের সঙ্গে তার পরিচয়। ল স্কুলে পড়ার সময় অভিবাসী খামারী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে গবেষণা করেন হিলারি, যা পরে তাকে শিশু অধিকার বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী করে তোলে। ১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনে এসে হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ওয়াল্টার মানডেলের অভিবাসী বিষয়ক সাব-কমিটিতে কাজ নেন। পরের বছর ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জর্জ ম্যাকগোভার্নের হয়ে পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে যান প্রচারের কাজে। হোয়াইট হাউজের দিনগুলিতে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস দেহরক্ষীরা মিসেস ক্লিনটনের জন্য যে কোডনেম নির্ধারণ করেছিল তার নাম ছিল এভারগ্রিন বা চির-সবুজ।
১৯৯৭ সালে হিলারি ক্লিনটন আমেরিকার সেরা সঙ্গীত পুরস্কার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।

অবশ্য এটা ছিল নন-মিউজিক্যাল ক্যাটেগরিতে। `ইট টেকস আ ভিলেজ` শিরোনামে হিলারি ক্লিনটনের লেখা বইটির অডিও সংস্করণ এই ক্যাটেগরিতে বিজয়ী হয়। বইয়ের মূল বিষয় ছিল শিশুদের বৃদ্ধি এবং শিক্ষা। মিসেস ক্লিনটন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। হিলারি ক্লিনটন ২০০০ সালে নিউ ইয়র্কের সিনেটার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীটা করেন এবং বিজয়ী হন। ২০০৬ সালে একই পদের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে পুনর্নিবাচিত হন। হিলারি রডহ্যাম ১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে যখন বিল ক্লিনটনকে বিয়ে করেন, তখন পশ্চিমা দেশের প্রথামত তিনি স্বামীর পদবী গ্রহণ করেননি। তবে কিছুদিন পর বিল ক্লিনটন যখন রাজনৈতিক পদ গ্রহণ করেন তখন মিসেস ক্লিনটনের নাম হয় হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন।

অবশ্য পরে তিনি নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হিলারি ক্লিনটন নামেই তিনি পরিচিত হতে চান। ২০০৪ সাল থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি শুরু করেন। কিন্তু চার বছর পর নিজ দলীয় প্রার্থী বারাক ওবামার সঙ্গে মনোনয়নের দৌড়ে হেরে যান। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে হিলারিকেই নিজের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করেন ওবামা। এ দায়িত্ব পালনকালে ২০১২ সালে লিবিয়ায় জঙ্গি হামলায় রাষ্ট্রদূতসহ ও চার মার্কিন নাগরিক নিহত হওয়ার জন্য হিলারির ব্যর্থতাকেই দায়ী করে থাকেন রিপাবলিকানরা। এ ছাড়া সরকারি কাজে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের ঘটনাও বেশ বিতর্কে ফেলে তাঁকে। তবে সব বাধা ঠেলে এগিয়ে চলেন হিলারি।

মন্ত্রী থাকাকালে বিশ্বের ১১২টি দেশ ভ্রমণ করে আলোচনায় আসেন হিলারি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে জোর দেন তিনি। শিশু ও নারী পাচারের বিপক্ষে নেন শক্ত অবস্থান। নারীদের শিক্ষা ও ব্যবসায় অগ্রাধিকার দেন। তার সময়েই যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নারী ও শিশুর ওপর যুদ্ধকালীন সময়ে সহিংসতা রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তাব আনে। দেশে এবং দেশের বাইরে সমকামীদের স্বীকৃতি নিয়েও সোচ্চার ভূমিকা রাখেন হিলারি। তিনি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সেই সময়ই শুরু হয় ‘আরব বসন্ত।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সে সময় আরব ভূমির বিভিন্ন দেশে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে বলে ধারণা করা হয়।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধও সে সময় বিস্তৃতি পায়। হিলারির সময় আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী সাফল্য পেলেও মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেটের গোড়াপত্তন ঘটে। বিরোধীরা ওই উত্থানের জন্য হিলারির পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করে থাকে। ২০১২ সালে লিবিয়ার বেনগাজিতে সন্ত্রাসী হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ চারজন নিহত হলে হিলারিকে কংগ্রেশনাল কমিটির শুনানির মুখোমুখি হতে হয়। ওই শুনানির সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হিলারি, ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। কয়েক বছরের তদন্ত শেষে কংগ্রেশনাল কমিটি ওই হামলার জন্য হিলারিকে দায়ী না করলেও তার প্রশাসনের অদক্ষতাকে চিহ্নিত করে। ২০১৩ সালে হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়েন।

Leave a Comment