হাজারো মানুষের বিশ্বাসে বেঁচে আছেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু

  • কামরুন নাহার স্মৃতি
  • মার্চ ১৮, ২০১৯

নেতাজী অর্থাৎ বীর দেশপ্রেমিক সুভাষচন্দ্র বসুর ভারতবর্ষ থেকে পালানোর ঘটনাটা ভাবলে গল্প বলেই মনে হয়। ভারতবর্ষের পুলিশ তাঁকে চিনত, তাঁর খোঁজখবর রাখত। অথচ সেই সব পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি কলকাতা থেকে কাবুল পালিয়ে গেলেন। কারোর মনে এতোটুকুও সন্দেহ জাগল না!

সুভাষচন্দ্র জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় মুক্তির জন্য অনশন শুরু করেন। মুখ ভরতি দাঁড়ি, কামানো হয়নি। অনশনের জন্য অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে জেল থেকে এনে তাঁর বাড়িত্র রাখা হল। ইংরেজরা অবশ্য বাড়িতে সতর্ক পাহারাদার বসাল। তাদের তীক্ষ্ণ নজত এড়ানো মুশকিল। এই সব ব্যাপারকে পরোয়া করতেন না সুভাষচন্দ্র  আগে থেকেই তিনি সব যোগাড়যন্ত্র করে রেখেছিলেন। জেলে বসে দাঁড়ি রাখার উদ্দ্যশ্যটা ক্রমশ স্পষ্ট হলো  দাঁড়িওয়ালা শিখের বেশ ধরে তিনি যখন পাহারাদারদের সঙ্গে দেখা করেই বাড়ি থেকে বের হলেন তখন তারা বুঝতেই পারলো না শিকার পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বোকা বানিয়ে তিনি এলেন পেশোয়ারে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে কাবুলে গেলেন এবং লালা উত্তমচাঁদের বাড়িতে উঠলেন। আসলে এটাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। দেশে বসে পদে পদে পুলিশের ভয় অথচ তাঁর স্বপ্ন ভারতকে যে কোন উপায়ে স্বাধীন করতেই হবে  

কাবুল থেকে মস্কো। তারপর বার্লিন। ব্যাপারটা শুনতে যতো সহজ, কাজে মোটেই তেমন ছিল না। পদে পদে গুপ্তচরের চোখ এড়িয়ে চলতে হয়েছিল তাঁকে বার্লিনে এসে সুভাষচন্দ্র হিটলারের সাথে দেখা করলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে সব ভারতীয় সৈন্য জার্মান ও ইতালিয়ানদের হাতে বন্দি হয়েছিল, তাদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র এক বাহিনী গড়ে তুললেন। প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার লোক। জার্মান সেনাপতিরা এই বাহিনীকে ট্রেনিং দেবার ভার নিলেন। এই বাহিনীকে হিটলাত বলেছিলেন 'ফ্রীস ইন্ডিয়েন'। বছর দুই বাদে সুভাষ গেলে সিঙ্গাপুর। শ্যাম, জাভা, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে ভারতীয়রা তাঁর সাথে দেখা করল। নেতাজীকে সাহায্য করার জন্য তারা প্রস্তুত। গড়ে উঠল বিরাট বাহিনী। ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৬শে অক্টোবর স্বাধীন ভারত সরকার গঠিত হল। রাষ্ট্রপতি এবং বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হলেন 'নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু'।  জার্মানী, ইতালি, জাপান, থাইল্যান্ড ইত্যাদি ন'টি রাষ্ট্র মেনে নিল এই নতুন সরকারকে। সর্বত্র গভর্নমেন্টের শাখা ছড়িয়ে পড়ল। আজাদ-হিন্দ রেডিও স্টেশন বসল, আজাদ-হিন্দ ডাকটিকেট বেরুল।

নেতাজী এবার শুরু করলেন আক্রমণ। 'দিল্লী চলো' হুংকার উঠল। সৈন্যদলের মধ্যে একদল চলল ইম্ফলের দিকে, অন্য দক কোহিমার দিকে। ভারতের মাটিতে স্বাধীন ভারতের বাঘমার্কা নিশান উড়িয়ে দিলেন তাদের সেনাপতি মেঃ জেঃ শাহ নেওয়াজ। কিন্তু আজাদ-হিন্দ দল বেশিদূর এগোতে পারেনি  জাপান সাহায্য করবে বলে আশা দিয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সাহায্য পাওয়া গেল না। নেতাজীর সেনাদের খাদ্যদ্রব্য, অস্ত্রশস্ত্র, পোশাক পরিচ্ছদ সব কিছুরই নিদারুণ অভাব। তাদের ছিল শুধু মনের জোর। তাই নিয়েই লড়াই চলল কিন্তু ব্রিটিশদের বোমারু বিমানের কাছে কী করে তারা দাঁড়াবে? এর উপর আবার বর্ষা নামল। পিছু হটতে লাগল নেতাজীর বাহিনী। বাধ্য হয়ে কর্নেল সেহগল আত্নসমর্পণ করলেন আর শাহ নেওয়াজ বন্দী হলেন।

কিন্তু আশা ছাড়লেন না নেতাজী। তাঁর প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হল। একদিন তিনি সফল হবেনই, এ বিশ্বাস তাঁর মনে আছে। ওদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী হেরে গেছে, জাপানীরা আত্নসমর্পণ করেছে। এ দুটি দেশ থেকেই সাহায্য পেয়েছিলেন নেতাজী। তিনি জাপান সরকারের নির্দেশে বিমানে চললেন টোকিওর পথে। শোনা যায়, টোকিও যাবার পথে তাইওয়ান দ্বীপের তাইহোকু বিমানঘাঁটিতে এক বিমান দূর্ঘটনার ফলে তিনি মারা যান। নেতাজীর শেষ জীবনটা আজও রহস্যাবৃত রয়ে গেছে কিন্তু নেতাজী রয়ে গেছে হাজারো মানুষের বিশ্বাসে।।

Leave a Comment