মেধাবী বিক্রমের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ

  • ওমেন্স কর্নার ডেস্ক
  • নভেম্বর ২৩, ২০২০

খুশি গ্রামবাসীরা নিজের ইচ্ছা শক্তি অধ্যবসায় ও মানসিক দৃঢ়তার ডাক্তারি পড়তে পৌঁছে গেল সোনাপুর গ্রামের অত্যন্ত দরিদ্র মেধাবী পরিবারের সন্তান বিক্রম পাল। ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রটি বাজে দক্ষিনাল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করে মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনার জন্য ভর্তি হয় স্থানীয় বানবোল হাইস্কুলে। মাধ্যমিক স্তরে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পড়াশোনা করে ২০১৫ সালে সে মাধ্যমিক পাস করে ৬৪২ নম্বর নিয়ে। প্রায় ৯২% নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাস করেছে ভর্তি হয় দেবীনগর কৈলাস চন্দ্র রাধারানী উচ্চ বিদ্যাপীঠে।

উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করে সে ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৪৪৭। শতাংশ হিসাবে প্রায় ৯০ শতাংশ। মূলত পূর্ব পুরুষেরা মাটির বাসনপত্র বানালেও বর্তমানে মাটির দাম বৃদ্ধি, এবং মাটির বাসন পত্রের চাহিদা কমে আসায় বিক্রমের বাবা এখন বাড়ির সামনে ছোট একটি মুদিখানার দোকান চালান। সেটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উৎস ছিল। অল্প কিছুদিন আগে বিক্রমের দাদা উত্তম পাল NREGS প্রকল্পে রোজগার সহায়ক হিসাবে কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে চাকুরিতে যোগ দেয়। অভাব থাকা সত্বেও পরিবারের দুই সন্তানের পড়াশোনার জন্য কোন খামতি রাখেননি বাবা নীরেন্দ্রনাথ পাল এবং মা প্রমিলাবালা পাল।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় নিয়মিত দুধ খাওয়ার উপকারিতা জানেন ? 

২০২০ সালের NEET পরীক্ষায় ৬০০ নম্বর পেয়ে সর্বভারতীয় রাঙ্কিং দাঁড়ায় ২০১৬৬ এবং পশ্চিমবঙ্গের রাঙ্কিং দাঁড়ায় ৯৩৫ এ অবস্থায় খুশির ছোঁয়া সমগ্র সোনাপুর গ্রামে। খুশি তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা এবং ভীষণ আনন্দিত দেবীনগর কৈলাস চন্দ্র রাধারানী উচ্চ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক উৎপল দত্ত। উৎপল বাবু জানালেন, এবছর আরো দুজন বিদ্যালয় থেকে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। এতে আমরা সকলেই খুশি। আমরা ধন্যবাদ জানাই, বানবোল হাই স্কুলের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের। কারণ বিক্রমের পড়াশোনার ভিত্তি বানবোল হাই স্কুল তৈরি করে দিয়েছে বলেই আজ এই সাফল্য। বিক্রম অবশ্য তার সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব টাই তুলে দিতে চাইল বানবোল হাই স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের। তার কথায়, আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি, এর পেছনে বানবোল হাই স্কুলের অবদান অপরিসীম।

বিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক পার্থপ্রতিম দাস আমাকে ভীষণভাবে সহযোগিতা করেছেন। তার অনুপ্রেরণা আমাকে সব সময় নতুন পথে চলতে সাহায্য করেছে। ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর আমি রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় জুওলজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু মানসিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এই অবস্থায় দুটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ডাক্তারি প্রয়োজনীয় কোচিং নিয়েছি ও পড়াশোনা করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়বার সুযোগ পেয়েছি এবং তাই আজকে আমি ভীষণ খুশি। ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা আমার পরম উদ্দেশ্য হবে বলে জানিয়েছে বিক্রম। প্রত্যন্ত গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে ডাক্তার হওয়া অসুবিধা মেনে নিয়ে তার বক্তব্য, ঠিকমতো পড়াশোনা করা এবং পরিবারের সাহায্য পেলে গ্রামীণ এলাকায় মেধার কমতি নেই।

আরো পড়ুনঃ চিলি চিকেন

বাবা নীরেন্দ্রনাথ পাল মুদিখানা দোকান চালিয়ে বিপুল অর্থ খরচ অসুবিধাজনক বলে জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য সরকারি সহযোগিতা পেলে ভালো হতো। বিপুল পরিমাণে খরচ কত দিন চালিয়ে যেতে পারবো, জানিনা। দাদা উত্তম পাল অবশ্য ভাইয়ের জন্য সমস্ত রোজগার তুলে দিতে প্রস্তুত। ভবিষ্যতে নিউরোসার্জন হওয়ার বাসনা নিয়ে আজ বর্ধমানের পথে বিক্রম। চোখে তার অসীম স্বপ্ন, বুকে তার প্রত্যাশা। একটি কথা বারবার বলে চলেছে, মানসিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আমি যখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না যে কি করব, তখনও পরিবারের প্রত্যেককে যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে আমি ভীষণ খুশি। পরিবারের সাহায্য পেয়েছি বলে, আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment