কমে যাচ্ছে স্মরণশক্তি? অবহেলা নয়।

  • আল আমীন
  • মে ৪, ২০১৮

ছোটবেলা থেকেই আমরা দেখে আসছি, আমাদের দাদা-দাদী বা এই ধরণের বয়স্ক যাঁরা আছেন, তারা অন্যান্য অল্পবয়স্কদের তুলনায় কানে কম শোনেন। সাধারণত এ থেকেই আমাদের ধারনা হয়ে থাকে যে, বৃদ্ধ হলে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। তবে এটা কি জানেন, যে শুধু বৃদ্ধদের নয়, অন্য যে কারো হতে পারে এই সমস্যা। আর এটি রীতিমত একটি রোগও বটে। মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় এটাকে বলা হয় আলঝেইমার্স (Alzheimer) রোগ। 
জার্মান সাইক্রিয়ার্টিস্ট Alois Alzheimer সর্বপ্রথম এ রোগের বিষয়ে আলোচনা করেন ১৯০৬ সালে। আর তারই নাম অনুসারে এ রোগের নাম রাখা হয়।

কেন এমন হয়?

এ রোগের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো কারণ নেই। ঠিক কেন এবং কীভাবে এ রোগ হয়, সে ব্যপারেও তেমন কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। তবে গবেষকদের কেউ বলেছেন যে, আমদের ব্রেইনে যে সকল উপাদান বিরাজমান, উপাদানগুলোর ঠিকমতো আদান-প্রদানে যখন বিঘ্ন ঘটে তখনই এমন সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। তবে এটাকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।  কেউ কেউ আবার এই রোগ পেয়ে থাকেন উত্তরাধিকার সূত্রে। পরিসংখ্যান বলছে, শতকরা ১৫ ভাগ রোগীই এটা পেয়ে থাকেন উত্তরাধিকার সূত্রে। এ রোগ হলে মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে আসতে থাকে, বিশেষ করে Ceribral Cortex এবং Hippocampus কমতে থাকে উল্লেখযোগ্য হারে।

লক্ষণসমূহঃ

স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে সেটা শর্ট টাইম কিংবা লং টাইম, দু’টোই হতে পারে। হতে পারে এখনই কোনো কাজ করেছেন, সেটা ভুলে গেছেন। এবং এই ধরণেই সমস্যাই বেশি। এ সকল রোগীর মাঝে সবসময় সব কাজে কী যেন এক দ্বিধা কাজ করতে থাকে। এই কোনো কাজ করলাম, এই ভুলে গেলাম করেছি কিনা। এখনই কিছু শুনলাম, অমনি ভুলে গেলাম। এমন হতে পারে।

মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়,নিজের কাজে নিজেই বিরক্ত এমন। সব কিছুতে ড্যাম কেয়ার একটা ভাব চলে আসে, আগ্রেসিভ আচরণ যাকে বলে। অন্যের কথা বোঝার মতো ধৈর্য কিংবা শক্তি লোপ পেতে পারে। অকারণেই নিজেকে ক্লান্ত মনে হতে পারে। অনেক সময় এমনও হতে পারে, দম আটকে আসছে, কথা বলতে চেয়েও কথা বলতে পারা যাচ্ছে না। বাকশক্তিহীনতা যাকে বলে। এই ধরণের রোগী শিকার হন গভীর ডিপ্রেশনের। পরিবার বন্ধুবান্ধব সবার সাথে সৃষ্টি হয় ভুল বোঝাবুঝির। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায়, রোগী নিজে এটাকে স্বীকার করছেন না। সব কিছু মিলিয়ে এক জটিল সমস্যা দেয়।

কী করবেন?

এমন সমস্যা দেখা দিলে রোগীকে যথাসম্ভব দ্রুতই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ডাক্তার রোগ নির্ণয় করবেন রোগীর মেডিকেল হিস্ট্রি শুনে। অথবা কোনোরকম পরীক্ষা নীরিক্ষা করাতে পারেন। পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যাবে ঠিক এই রোগ হয়েছে, নাকি মস্তিষ্কের অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে। যদিও এই রোগের উপর্যপুরি কোনো ট্রিটমেন্ট নেই। তবে কিছু কিছু ঔষুধ আছে, যেগুলো শতভাগ কার্যকরী না হলেও কিছুটা উপশম পাওয়া যায়। আর ডাক্তারের কাউন্সেলিং এবং পরিবারের ব্যক্তিবর্গ তথা, রোগীর আশেপাশের লোকজন যদি মানসিক সাপোর্ট দেয়, রোগীর ব্যাপারে যত্নবান এবং সহনশীল হয়ে থাকেন, তাহলেই রোগীর জন্য স্বাভাবিক জীবন যাপনে সুবিধাজনক হবে।

সাবধানতাঃ

এই রোগ থেকে দুরে থাকতে যেটা করতে পারেন, সেটা হলো ক্লোস্টেরল গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করা। কেনোনা অনিয়ন্ত্রিত ক্লোস্টেরল গ্রহণে এ রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ধুমপানের অভ্যাস যাদের আছে তারাও সাবধান হোন।

আর/এস

Leave a Comment