শিশুরা কেন খেতে চায় না ? 

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • নভেম্বর ২১, ২০১৭

শিশুর খেতে না চাওয়া মায়েদের বেশ প্রচলিত একটি সমস্যা। শিশুর খাবারের ওপর তার বৃদ্ধি, পুষ্টি-এসব জড়িত। তাই কী কারণে শিশুটি খেতে চায় না এই বিষয়টি জানা খুব জরুরী । 

বাচ্চার খেতে না চাওয়া :

বাচ্চার খেতে না চাওয়া সত্যি সত্যিই একটি বড় সমস্যা। আজকাল সবার ঘরে একটা-দুটো বাচ্চা থাকে । বাচ্চারা খেতে না চাইলে মায়েরা নিশ্চয়ই চিন্তায় থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই জিনিসটি খুব গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেখতে হবে বাচ্চা ঠিকমতো বাড়ছে কি না ! সে জন্য নিয়মিত বাচ্চার ওজন দেখতে হবে! তার উচ্চতা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তার বয়সের অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে কি না! বাচ্চার যে মাইলস্টোন ডেভেলপমেন্ট খেলাধুলা, চালচলন, কার্যক্রম সব ঠিক আছে কি না- এসব দেখতে হবে।

এগুলো যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে দেখতে হবে মায়ের কোনো সমস্যা কিনা ! অনেক সময় আমরা দেখি মায়েরা খুব জোরাজুরি করেন শিশুকে খাওয়ানোর জন্য। একটু খাওয়া নিয়ে সারা দিন বাচ্চার পেছনে ঘোরাঘুরি করেন। তারপর হয়তো একই খাবার প্রতিদিন দেন, রোজ খিচুড়ি, রোজ সুজি- এগুলোতে বাচ্চারা বিরক্ত হয়ে যায়। এসব বিষয়গুলো দেখতে হবে। এরপর দেখতে হবে মা খাওয়ার জন্য বাচ্চাকে খুব মারধর করছে কি না। এই জিনিসগুলো মাকে বুঝতে হবে। মাকে কোনোভাবেই বিরক্ত হওয়া যাবে না। বুঝতে হবে, আপনার বাচ্চার ওজন ঠিক আছে, বাড়ছে ঠিকমতো, তাহলে আপনার একঘেয়ে খাবারে একটু পরিবর্তন আনতে হবে। খাবারটা রঙিন হতে হবে, মারধর করবেন না, খাবার একটু বিরতি দিয়ে খাওয়াতে হবে।

যেমন, ছয় মাসের একটি বাচ্চা। তাকে আপনি বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, আবার বাড়তি খাবারও খাওয়াচ্ছেন। তাহলে তার খাবারটি কয়বার হওয়া উচিত। দুধ তার প্রধান খাবার। পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেবেন। তাকে দুবার বাড়তি খাবার দিতে হবে। আড়াইশ এমএলের বাটির আধা বাটি সকালে এবং রাতে বা দুপুরে এবং রাতে খাওয়াতে হবে। সেটা না করে যদি খুব ঘন ঘন, এক চামচ, দুই চামচ করে খাওয়ান তখন খাবারের প্রতি শিশুর বিরক্তি চলে আসে। তাই বিরতি দিয়ে খাওয়াতে হবে। আড়াই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা পরপর খাওয়াতে হবে। এটি হবে বয়স অনুসারে। এবং পরিমাণটিও গুরুত্বপূর্ণ। আমি এক বাটি খাবার নিয়ে বসে থাকলাম। বাচ্চার সেটা প্রয়োজন নেই। তাই কতটুকু তার প্রয়োজন, কতটুকু তাকে খাওয়াতে হবে এবং কতটুকু বিরতি দিতে হবে ওই বয়স পর্যন্ত, মাকে সেটি জানতে হবে।

আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন , কোনোভাবেই খাওয়া নিয়ে বাচ্চাকে মারধর করা যাবে না। তাহলে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ থাকবে না, অনীহা চলে আসবে।

পায়খানা, প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না ?

পায়খানা, প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না সেটিও মাথায় রাখতে হবে। প্রতিদিন যদি ওর প্রস্রাব ঠিকমতো হয় , পায়খানা ঠিকমতো হয় তাহলে আপনি এত ভাবছেন কেন ?
যে বাচ্চাটি নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করে, তার দিনে একবার পায়খানা হলে বুঝতে হবে সব ঠিক আছে। তারপর যদি দুবার হয় কোনো অসুবিধা নেই। প্রথম সময় হয়তো অল্প একটু করেছে। পরে আরেকবার করে পরিষ্কার হয়ে গেল। তাহলে তার জন্য চিন্তার কারণ নেই।

সবার খাবার হোক বাচ্চারও খাবার :

আমরা অনেকে বাচ্চাকে আলাদাভাবে খেতে দিই। পরিবারের লোকজন যখন যা খায় তাদের সঙ্গেই যদি বাচ্চাকে বসাই, সবার খাওয়াটা সে দেখবে। তখন তার নিজে নিজে খাওয়ার অভ্যাস হবে। আসলে বাচ্চা যদি ছোট থাকে, তাকে ঘরের তৈরি খাবারটিই নরম করে দিতে হবে। তার জন্য অনেকে বলেন, খাবার ব্ল্যান্ডারে পিষে নিই, স্যুপ করে দিই। এগুলোর তেমন দরকার নেই। 

আমরা পরিবারে যেই খাবারটুকু খাই সেটাই একটু বাচ্চাকে নরম করে দিতে হবে। এর মধ্যে শাকসবজি, মাছ, মাংস- আমরা যেটা খাই সেটাই দেব। কিন্তু খুব লবণ বা খুব ঝাল দেব না। বাচ্চা যাতে খেতে পচ্ছন্দ করে এমন রঙিন করে দেব। যেন দেখে বাচ্চা খেতে চায়। এভাবে তাকে যতটুকু দরকার ততটুকু খেতে দিতে হবে।

বাচ্চার যদি অনেক খেলনা থাকে, তার মন ওই খেলনার দিকে চলে যায়। অনেক সময় আমাদের এগুলো ব্যবহার করতে হয়। তবে খুব বেশি জিনিস আমরা ব্যবহার করব না, এতে মনোযোগ ভিন্ন দিকে চলে যাবে। এটি খাওয়ার আগ্রহ কমিয়ে দেবে। এগুলো আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের যেটা করতে হবে, বাচ্চার বয়স অনুযায়ী সে যদি ঠিকমতো বড় হয়, ওজন ঠিকমতো থাকে, তার যদি বৃদ্ধি, কাজকর্ম ঠিক থাকে তাহলে এতো চিন্তার কিছু নেই। 

তবে কিছু বাচ্চা আছে যারা সত্যি সত্যি খায় না। এবং বৃদ্ধিটাও ঠিকমতো হয় না। তখন দেখতে হবে বাচ্চাটি অপুষ্টির শিকার হচ্ছে কি না বা তার রক্তশূন্যতা হয়েছে কি না ? না কি বাচ্চার ঘন ঘন কোনো সংক্রমণ হচ্ছে, যার জন্য খাওয়ার রুচি কমে যাচ্ছে? যদি শিশুটির এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা থাকে, অপুষ্টি থাকে- বাচ্চাটি বসে থাকবে, খুব বেশি সচল থাকবে না। তাহলে এগুলো দেখতে হবে। পাশাপাশি কৃমি আছে কি না দেখতে হবে। এ ছাড়া কিছু বাচ্চার থেলাসেমিয়া থাকতে পারে, অ্যাজমা থাকতে পারে, হয় তো ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন আছে– তখন বাচ্চাটিকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সে যে খায় না, এর কারণ কী খুঁজতে হবে? শুধুই কি ক্ষুধামান্দ্য না কি সঙ্গে আর কিছু রয়েছে, সেসব দেখতে হবে। দেখে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

রক্তশূন্যতা আছে কি না, এর জন্য হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন । কোনো ইনফেকশন আছে কি না, সেটা দেখতে রক্ত পরীক্ষা করতে পারেন , প্রস্রাব পরীক্ষা করতে পারেন । সমস্যা যদি সামান্য হয়, তাহলে তো ঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে বৃদ্ধি ব্যাহতও হলো না, ক্ষুধামান্দ্য ভাবও থাকল না। তবে যদি সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হলে, অনেক সময় লাগে। অনেক বাচ্চার কনজিনিটাল হার্টের সমস্যা থাকে। এটার ফলে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হয়। অনেক বাচ্চার জন্মগত সমস্যা হয়।

অনেক বাচ্চা কাঁদতে কাঁদতে হয়তো নীল হয়ে যায়। খাওয়াতে গেলে শ্বাস নিতে পারে না। কিছুদিন পরপর তার শ্বাসকষ্ট হয়, কাশি হয়, ঠান্ডা লাগে – এগুলো দেখলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। 

জিনগতভাবে শিশুটির বাবা-মায়ের গঠন যেমন হবে, তার গঠনটিও তেমন হবে। অনেক মায়েরা মোটা থাকেন, বাচ্চাটি রোগা থাকে। মায়েরা বলেন, আমার স্বাস্থ্য দেখেন, সবাই বলে বাচ্চার সব খাবার হয়তো আমি খাই। তবে দেখা গেল বাচ্চার বাবা হয়তো অতটা স্বাস্থ্যবান নয়। তখন আমরা বলি আপনার গঠন হয়তো পায়নি। বাবারটি পেয়েছে। আর মোটাসোটা হলেই কি ভালো? বাচ্চা তো সুস্থ আছে, সে খেলাধুলা করছে, ওজন বয়স অনুযায়ী ঠিক আছে, বৃদ্ধি ঠিক আছে। তাহলে কি আপনি মোটা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবেন নাকি বাচ্চার সুস্থতা দেখবেন ?

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment