মিমমেকার হিসেবে আমি নিজেকে ১০/১০ দেবো : মনসুরুল  

  • ফারজানা আক্তার
  • আগস্ট ১৭, ২০২১

মনসুরুল আজিজ! যার নামের সাথে অনেকগুলো বিশেষণ যুক্ত করার থাকলেও পজেটিভিটি টার্মটা সবার আগে যুক্ত হবে। সুস্থভাবেও মানুষকে নিয়ে রসিকতা করা যায়, ট্রল করা যায় তার উজ্জ্বল উদাহরণ আজিজ।

শক্ত মনোবল, দারুণ প্রতিভাবান, হিউজ সেন্স অফ হিউমার, কর্মক্ষেত্রে সফল , সুপুত্র  এবং পজেটিভিটিতে ভরপুর একজন মানুষ। সমসাময়িক নানান বিষয়সহ পজেটিভিটি নিয়ে আজকে তার সাথে আমরা কথা বলবো।  সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার। 

ওমেন্সকর্নার : করোনাকালীন সময়ে আমরা কেউ ভালো নেই। আপনার কী খবর ?

মনসুরুল  : ভালো থাকাটা অথবা খারাপ থাকাটা আসলে মানুষের জন্য সামগ্রিক। আর আমরা খুবই সামাজিক প্রাণী এজন্য একা একা ভালো থাকা বা একা ভালো থাকা খুবই কষ্টকর। আমাদের চারপাশে কত কিছুই ঘটছে যার কারণে আগের তুলনায় বলা যায় একটু খারাপ আছি। এবং এর কারণ ব্যক্তিগত না আসলে, এটা সামগ্রিকভাবে।

আমাদের চেষ্টাটাও আছে যে সবাই মিলে কিভাবে বা কতটুকু ভালো থাকা যায়। এটা রিয়েলাইজ করাটা খুব ইম্পরট্যান্ট যে আসলে একা একা ভালো থাকা যায় না বা একা একা খারাপ থাকা যায় না বেশিদিন। একা একা ভালো থাকা যায় না। এটা আসলে খুবই ডিফিকাল্ট। 

ওমেন্সকর্নার : আমাদের জীবনে হুটহাট ঝড় চলে আসে এই ঝড় সামাল দেওয়ার উপায় কি? 

মনসুরুল  : আমাদের জীবনে হুটহাট ঝড় চলে আসা যেটাকে আনসার্টেনিটি বলে। এই আনসার্টেনিটিটাই আসলে এক ধরনের সার্টেনিটি। আমাদের সৃষ্টিকর্তার একটা মাস্টার প্ল্যান থাকে। এখানে আমরা ইন্ডিভিজুয়ালি আসলে অতটা ম্যাটার করি না। আগের পয়েন্টের সাথে এই পয়েন্টটা আমি ইকো করবো। আমার চিন্তাগুলোই আসলে এরকম, আমার কাছে সবসময় মানুষের এই জার্নিগুলো খুব সামগ্রিক লাগে। 

আমাদের জীবন অনেক বড় একটা প্ল্যানের ছোট অংশ। লাইফে হুটহাট ঝড় চলে আসা এগুলো আসলে পার্ট অফ লাইফ। এগুলো মেনে নিতে হবে আমাদেরকে এবং এরকম আজকে কালকে আমার সাথে বা সবার সাথেই ঘটবে। লাইফ ইজ ট্রুলি আনফেয়ার। কিন্তু আমরা যদি সামগ্রিকভাবে দেখি তাহলে জীবন আসলে অতটা আনফেয়ার না। 

উদাহরণস্বরূপ উন্নত বিশ্বে বা জীবনে যারা সফল হয়েছে তারা একটা লম্বা সময় ধরে হার্ড ওয়ার্ক করছে, ডেডিকেশন আছে, অনেক ঘন্টা একটা জিনিস নিয়ে কাজ করছে।  ফাইনালি অধিকাংশ মানুষই কিন্তু ওই কাজটায় সফল হয়েছে। তাই জীবন যখন আমরা বড় করে দেখি তখন আসলে ফেয়ার কিন্তু এটা আনফেয়ার হয়ে যায় যখন আমরা ইন্ডিভিজুয়ালি দেখি যে আমার সাথে কি হলো! 

এটা আমাদের সব সময় মেনে নিতে হবে আমরা যেহেতু মাস্টার প্ল্যানের একটা অংশ সেহেতু আমি যেভাবে চাচ্ছি সামগ্রিকভাবে হয়তো জিনিসটা ঠিক হবে না। কারণ আমি তো আসলে পুরো জিনিসটা দেখতে পাচ্ছি না যেভাবে আমার সৃষ্টিকর্তা বা প্রকৃতি দেখছে। আমি আসলে এভাবেই নিজেকে সামলাই। 

আরো পড়ুন :  মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু মিথ এবং বাস্তবতা 

ওমেন্সকর্নার :  চারপাশে এত নেগেটিভিটি এর মধ্যে আপনি কিভাবে পজিটিভ থাকেন? 

মনসুরুল  : আমি যতটা না পজিটিভ থাকি তার থেকে এক্সপ্রেস করি বেশি কারণ, পজিটিভিটি যত এক্সপ্রেস করা যায় এটা তত হেল্পফুল আমার জন্য এবং আমার চারপাশের মানুষদের জন্য। এত নেগেটিভিটি বা সমস্যার মধ্যে পজিটিভ জিনিস দেখার ক্ষেত্রে আসলে আমাদের ইচ্ছে বা চয়েস গুরুত্বপূর্ণ। অন্ধ মানুষের হাতি দেখার গল্পটার মতো। একি ঘটনার অনেক গুলো দিক আছে, আমি কোন দিকটা নেবো বা সেটাকে কিভাবে বর্ণনা করবো এটা সবসময় ক্রিটিকাল। 

বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেনদের কথা বলা যায়। একটা সময় এরা খুব খারাপভাবে হারতো। ম্যাচ শেষে যখন জিজ্ঞেস করা হতো ম্যাচের পজিটিভ দিক কি তখন ক্যাপ্টেনরা বলতো কোনো একজনের পারফর্মেন্স, কোনো ক্যাচ, ব্যাটিং কিছু একটা মেনশন করতো। পয়েন্ট হচ্ছে যে উনি যদি সিদ্ধান্ত নেন ওই পজিটিভ টুকুই দেখবে, ওটার উপর কাজ করবে, আরেকটু ইম্প্রুভ কিভাবে করা যায় সেটা ভাববেন। 

আসলে এটা কিন্তু সম্ভব। সেই সময় আমাদের ক্রিকেট দল খুবই দুর্বল ছিলো কিন্তু সেখান থেকেই ছোট ছোট পজিটিভ ঘটনা ঘটতে ঘটতে আমরা আজ মোটামুটি শক্তিশালী একটা দল হয়েছি। তাই এটা সম্পূর্ণ আমাদের উপর যে একটা ঘটনা আমরা কিভাবে দেখবো, সেটা থেকে কতটুকু পজিটিভ এনার্জি নেবো। ইংরেজিতে একটা কথা আছে যে "ফেইক ইট আনটিল ইউ নিড ইট"। অনেক সময় ফেইক করতে করতেই অনেকে তৈরি করে ফেলে জিনিসটা। কারণ এটা হচ্ছে নিজের কনফিডেন্স, নিজের বিশ্বাসের উপর যে আমি পজিটিভ।

ওমেন্সকর্নার : আপনার কাছে সফলতার সংজ্ঞা কী ?

মনসুরুল  :  সফলতার সংজ্ঞা আসলে খুবই ট্রিকি। আমার জার্নিতে আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে যে এটা বয়স অনুযায়ী ইভলভড করতে থাকে। একটা সময় আমাদের মনে হয় যে সফলতা হচ্ছে আমাদের মা-বাবা বা সোসাইটির মানুষজন কি চাচ্ছে সেটা করতে পারা। তারপর একটা ফেইজ আসে যে বন্ধু কি করতে পারলো। সফলতার জার্নিটা খুব ভ্যারি করে। এটা ছোটকালে একরকম থাকে, যৌবনে একরকম হয় তার পরের ফেইজে আরেকরকম হয়।

যত বয়স বাড়তে থাকে সফলতার ডেফিনেশনটা তত আউট ওয়ার্ল্ড থেকে ইন-ওয়ার্ল্ডে আসতে থাকে। তখন বাইরের সফলতার চেয়ে নিজের কাছে বা মনে আমি পরিপূর্ণ কিনা, ভালো আছি কিনা এই প্রশ্নগুলো আসে। এই জার্নিতে কারো কারো ক্ষেত্রে অনেক লম্বা সময় লেগে যায় যে আউট ওয়ার্ল্ড সফলতার থেকে ইন-ওয়ার্ল্ড সফলতা খোঁজা। 

যে যত দ্রুত এই জায়গায় আসতে পারে তার সফলতা তত দ্রুত আসে। আমার সফলতার স্কেলটা অন্য কারো উপর নির্ভর না, আমি নিজে যেটা চাচ্ছি, যে ইম্প্যাক্টটা তৈরি করতে চাচ্ছি সেটা দেখতে পারাটা আমার আছে সফলতা মনে হয়। পপুলার সফলতার ডেফিনেশন নিয়ে আমার অনেক সমস্যা আছে। মানুষ ব্যর্থতা সেলিব্রেট করতে করতে আসলে সফল হয়। 

আরো পড়ুন :  মনোবিজ্ঞানী এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মধ্যে পার্থ্যক কী ?

ওমেন্সকর্নার : অনেকে মনে করেন ট্রল মানেই নোংরামি। এবং এই মনে করাটা ভুল সেটাও বলা যাচ্ছে না। কারণ আমাদের চারপাশে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ধরণের ট্রল হয় সেখানে নোংরামি বেশি থাকে। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কী ?

মনসুরুল  :  ট্রলিং এক ধরনের হিউমারের ফর্ম। ট্রলিং তো নতুন কিছু না। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আমরা এখন এসব বেশি দেখতে পাচ্ছি। কাউকে ছোট করে হাসাহাসি করা এগুলো আমরা ছোটবেলা থেকে বা তার আগে থেকেই দেখে আসছি। এই ফর্মটারই একটা ফর্ম আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি। 

এগুলো মানুষের মধ্যে আগে থেকেই ছিলো। এখন এগুলো ব্যাপকভাবে হয়েছে নাকি কমে গিয়েছে সেই কমেন্ট অবশ্য আমি জানিনা। টেকনোলজির যুগ বলে এখন বেশি সামনে আসছে। আমি মুখে যতই বলি এগুলো ভালো না কিন্তু এগুলো তো এভাবেই চলে আসছে বা মানুষের ইভ্যুলোশন তো এভাবেই হয়েছে। পৃথিবীর শক্তিশালী দেশ দুর্বল দেশের সাথে কি করছে সেটাও তো এক ধরণের ট্রলিং।

এটা পৃথিবীর মানুষের মেকানিজমের একটি অংশ।  যত বেশি মানুষ ইনলাইটেড হবে তত হয়তো বা চলে যাবে আস্তে আস্তে। আসলে ট্রলিং এক্সিস্ট করে সৃষ্টি থেকে শেষ পর্যন্ত হয়তো থাকবে, এটার মাত্রাটা কতটা কন্ট্রোল হবে সেটা আমাদের শিক্ষামনন, বিকাশ এগুলোর উপর ডিপেন্ড করে। 

ওমেন্সকর্নার : নিঃসন্দেহে আপনি একজন ভালো মিমি মেকার। মিমি মেকার হিসেবে নিজেকে ১০ এ কত দিবেন ?

মনসুরুল  :  মিমমেকার হিসেবে আমি নিজেকে ১০/১০ দেবো। কারণ আমি খুবই নার্সিসিস্ট একজন মানুষ। আমি শৌখিন মিমমেকার, অনেক বছর ধরে শখ করে মিম বানাচ্ছি। আমার কাছে মনে হয় এটা একটা ফর্ম যেখানে গল্প বলা যায়, ছবির বা হাসির। একটা ছবি আর একটা লাইন ইউজ করে একটা গল্প বলা যায়। আমার মনে হয় আমি একটু অলস তাই অলস মানুষের জন্য একটা ছবি আর লাইন দিয়ে খুব কম সময়ে গল্প বলা যায়। আমি এটা নিজের জন্যই করি তাই নিজেকে ফুল মার্কই দেবো। 

আরো পড়ুন :  আপনি কি আইএসটিজে ( ISTJ ) ব্যক্তিত্বের অধিকারী ?

ওমেন্সকর্নার : সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার বাবা - মায়ের সাথে আপনার অনেক এক্টিভিটির আপডেট দেখতে পাই। চারপাশে যখন বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বেড়ে গেলো, বাবা - মায়ের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আইন করা হচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে আপনি নিজের বাবা - মাকে একদম সন্তানের মতো করে আগলিয়ে রেখেছেন। সময় দিচ্ছেন। এই অনুভূতিটুকু একটু যদি শেয়ার করতেন!

মনসুরুল  : ক্লিয়ার করে নিই যে আমার কোনো ধারণা নেই আমি সন্তান হিসেবে কোনো স্পেশাল কিছু করছি। আমার কাছে মনে হয় সবাই করছে তবে সবাই হয়তো বা নিজের কথাটা এভাবে বলে না। এটা প্রথম শুরু হয় পাঁচ বছর আগে যখন বাবা অসুস্থ হয়ে যায়, তখন আমার কাছে মনে হয়ছে যে আমাদের মধ্যে এক ধরণের এডিশনাল দুঃখকষ্ট চেপে বসছিলো। ফ্যামিলিতে একজন খারাপ একটা রোগে আক্রান্ত, সপ্তাহে ২-৩ বার হাসপাতালে যেতে হতো। 

হাসপাতাল, চিকিৎসা দৌঁড়াদৌঁড়ি অনেক ছিলো। তখন আমি ভাবলাম যে এই ইস্যুগুলো কিভাবে মজার বানানো যায়৷ একটা ফ্যামিলিতে কেউ হাসপাতালে থাকলে যে তাদের সবসময় শোকেই থাকতে হবে এমন নয়। ওইদিকের ফানি সাইডগুলো আমি দেখিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এই গল্পগুলো বলা দরকার, যারা এরকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। 

ওই যে প্রথমে যেরকম বললাম হাতির কোন অংশ আমি দেখছি বা কিভাবে বর্ণনা করছি তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। আমার বাবা-মার সাথে পার করা কঠিন সময় পজিটিভ ভাবে ক্যাপচার করেছি। এতে হয়তো অনেকের মধ্যে পজিটিভ অনুপ্রেরণা তৈরি হতে পারে। এটা হয়েছেও। অনেকেই ইনবক্সে মেসেজ করে বলে। এটা অনেক ভালো লাগা। আমি খুবই ব্লেস যে কিছুটা হলেও করতে পেরেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা একটা সুন্দর প্ল্যাটফর্ম যেখানে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনুপ্রেরণা দেওয়া যায়। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সেটা করার।

আরো পড়ুন : আপনি কি সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত নেন ?

ওমেন্সকর্নার : চাইলে সোশ্যাল মিডিয়াকে অনেক ভালো কাজে ব্যবহার করা যায় আপনি সেটা অলরেডি করছেন। এই বিষয়ে অন্যদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলুন। 

মনসুরুল  : সোশ্যাল মিডিয়াকে ভালো কাজে ব্যবহার করা, এগেইন আমার কাছে যেটা মনে হয়, আগেও একই কথা বলছিলাম, আগে একটা নেগেটিভিটির ব্যাপার ছিল। সোশ্যাল মিডিয়া একটা প্ল্যাটফর্ম, যেটা অন্যান্য যেকোনো প্ল্যাটফর্মের মতোই সত্য। সো এইটা, এখানে আলাদা করে কিছু করতে হবে বা আলাদা করে কিছু বলতে হবে বা মানুষকে বলতে হবে এইটা এই ধরণের প্ল্যাটফর্ম,  এইটা অনেক লোকে দেখছে এই জন্য, এই ভাবেই কথা বলতে হবে, এইটা করতে হবে। আমি আসলে পার্টিক্যুলার ওই ভাবে এটা বিশ্বাস করি না। 

আমার কাছে যেটা মনে হয় মানুষের যারা আমাদের আপন, যেটা আমাদের পরিবার,  আমাদের শিক্ষক, আমাদের রাষ্ট্র, সবাইকে আসলে মানুষের যে মূল নীতিগুলা আছে, আমরা যেটাকে বলি ভ্যালু সিস্টেম আরকি; নীতিগুলা, শিক্ষা, পর্যাপ্ত শিক্ষা এইগুলোতে ফোকাস করতে হবে। এইগুলোতে ফোকাস করে, এটাকে রাইটলি সেট করতে হবে একটা মানুষের জন্য।  

এটা যখন সেট হয়ে যাবে, তখন অটোমেটিক্যালি না, এই বিষয়গুলো আসলে ক্ষুদ্র- একটা মানুষের জন্য। এটা একটা এক্সপ্রেশন। সে আজকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছে, তাকে সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দিলে সে গিয়ে অন্য কোথাও দিবে, চায়ের দোকানে দিবে, বা চায়ের দোকানে আগে দিতো, এখন ফেইসবুকে দিচ্ছে, ফেইসবুক থাকবে না, কালকে অন্য কিছু আসবে, কালকে অন্য কোথাও যেয়ে দিবে, এটাকে আসলে এত আটকানোর বা মনিটরিং করার কিছু নেই। 

আপনার যে মূল বিশ্বাস আছে সেই বিশ্বাসের একটা এক্সপ্রেশন এইটা আপনি এইটাতে বিশ্বাস করেন, কারণ আপনার যে বেড়ে উঠা , আপনার যে শিক্ষা, সেগুলো আসলে কেমন সেটার একটা রিফ্লেশন। আমি আসলে খুব সুপারফিশিয়াল লেভেলের লোক; এই সোশ্যাল মিডিয়াতে এরকম ভাল ভাল কাজ করব বা দেখাবো, না সোশ্যাল মিডিয়াতে  আপনি যদি মনে করেন মানুষ এরকমই হবে, এটাতো আসলে হয় না।  

এটাতো আসলে খুবই একটা সুন্দর প্রসেস। আপনি কিছু এভয়েড করতে চান আনফলো করে দেন, পার্টিকুলারলি আপনি ইন্টারেস্টেড... কিছু জিনিস দেখবেন, জীবন বরঞ্চ আরও বেশি কঠিন। জীবন আপনাকে অনেক সময় বাধ্য করায়। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতে তো আপনাকে কেউ বাধ্য করছে না। ইটস লাইক এ রোড, যেখানে  আপনি নিজেই চয়েজ করতে পারেন।

কিন্তু চয়েজ করার জন্য আপনাকে যথেষ্ট শিক্ষিত করা, যথেষ্ট ইনফর্ম করা, এই দায়িত্বটা কার? এই দায়িত্বগুলো হচ্ছে, পরিবারের, আমাদের শিক্ষক, সিনিয়র, গভঃমেন্ট - এদের। সো, এই রোলটা প্লে করছে আমার মনে হয় বাকি জিনিসটা আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়।  মূল ফোকাসটা আসলে পিছনে। সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাল বা খারাপ কাজ করা থেকে। 

আরো পড়ুন : আপনি সফলতা ধরে রাখতে চান ?

ওমেন্সকর্নার : এতো কাজ, দায়িত্ব পালন, মিমি মেইক করেও বেস্ট এমপ্লয়ির অবস্থান ধরে রাখার গোপন রহস্য কী ?

মনসুরুল  :  এখানে প্রশ্নটা হচ্ছে আমি মিম বানিয়ে বেস্ট এম্লয়ার। টু বি ভেরি অনেস্ট, এটা আসলে এইভাবে তো উত্তর দিলে মানুষ... আসলে তো আমার একটা সাইড যে সোশ্যাল মিডিয়াতে আছে সে তো শুধু আমার সোশ্যাল মিডিয়ার সাইডটাই দেখবে। এইটাই স্বাভাবিক। সো, আমার দিনের যে সময়টা আছে, সেটা যদি আমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ৮ ঘন্টা সময় দিতে বা দেয়ার কমিটমেন্ট আছে আমার অরগানাইজেশানের সাথে।  

৮ ঘন্টা যদি সময় দিই, বাকি সময় আমি দিনে যদি ১০টা পোস্টও করি, এইটা করতে তো আমার বেশি সময় লাগে না।  আসলে এটা একটা টাইম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার, এবং আমি বলব মডার্ন দিনে আসলে একটা সময় আমরা বলতাম যে ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স। এটার মানে হলো, লাইফ ওয়ার্ক ব্যালেন্স করা। কিন্তু এখন তো এই ডিজিটাল ইরাতে যেটা হয়েছে, সেটা হচ্ছে যে এইগুলার মধ্যে তেমন কোনো তফাৎ নাই। 

ওয়ার্ক লাইফ, ইওর প্রাইভেট টাইম পাবলিক টাইম, মানে - অনেক মিলে গেছে জিনিসগুলো। আমার ক্ষেত্রে আইডিয়া হলো যে,  ওয়ার্ক লাইফ ওইভাবে ব্যালেন্স করে যে করব ওইটা না। এখন এটা করছি বলে যে ওটা করব না, ব্যাপারটা আসলে সেরকম না। সবকিছু এখন মিক্সড হয়ে গেছে। 

যে আমাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছে, সে তো আমাকে বলতে পারবে না, আমি অরগানাইজেশানকে কী ডেলিভার করছি, অরগানাইজেশানই শুধু বলতে পারে যে, আমি অরগানাইজেশানকে কী ডেলিভারি করছি। সো, এটা যদি আসলে কেউ জাজমেন্ট করতে চায় বাইরে থেকে, সে আসলে ভুল জাজমেন্ট করে ফেলবে।

কারণ তার কাছে সব ধরণের ইনফরমেশন নাই। আমার ক্ষেত্রে সিক্রেট ইজ, ওয়ার্ক লাইফ ব্যলেন্সটা আলাদা আলাদা না। ইটস লাইক এ ফ্লো-এর মতো যেখানে all goes together, লাইফ এন্ড ওয়ার্ক এন্ড ব্যালেন্স... এক সাথেই সব কিছু করতে হয়। এক্ষেত্রে কমিটমেন্টগুলো কন্সিস্টেন্টলি মেইনটেইন করাটাই আসলে মূল ইস্যু।

ওমেন্সকর্নার : যেহেতু ওমেন্সকর্নারে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। ওমেন্সদের উদ্দেশ্য করে আপনার কিছু বলা উচিত। আপনার দৃষ্টিতে আমাদের সমাজে নারীদের অগ্রগতি কতদূর ? নারীরা তাদের প্রাপ্ত সুযোগ - সুবিধা, সম্মান এবং মেধার যথাযথ মর্যাদা পাচ্ছে ? 

মনসুরুল  : আমরা সমাজবিজ্ঞান বইয়ে পড়ে আসছি এটা পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ। বাই ডেফিনিশন এখানে পুরুষরা সব কিছু কন্ট্রোল করছে।  এখানে শুধু মাত্র সুন্দর কথা বলার জন্য আমি যদি বলি যে সবাই একইরকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, সেটা আসলে কোনোভাবেই সঠিক কথা হবে না। আমার কাছে মনে হয় এখানে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। এটা খুব সেনসিটিভ একটা জায়গা।

নারী উন্নয়ন, শিক্ষা এসব তো ফোকাস করা হয়েছে বিগত দশক ধরে৷ আমার কাছে মনে হয় এটা প্রতিনিয়ত গতদিনের চেয়ে ভালো হচ্ছে। এই ইম্পাথি, রেস্পেক্টের জায়গাটা যদি সবাই ধরে রাখে তাহলে আমি বলবো যে প্লেনটা রানওয়েতে আছে, এখন কিছু এক্সট্রা বুস্ট লাগবে, এক্সট্রা ফুয়েল লাগবে আর একবার ফ্লাইট হলে তখন এটা অটো পাইলটের জায়গায় চলে আসবে৷ অটোপাইলটের অবস্থায় যাওয়ার জন্য নারী পুরুষ সবাইকেই সমানভাবে কাজ করতে হবে। পুরুষের দায়িত্ব তো অবশ্যই বেশি। কিছুটা দ্বায়ও আছে কারণ এতদিন কিছু কিছু এডভান্টেজ তারা পেয়েছে। 

ওমেন্সকর্নার : পাল্টা আরেকটি প্রশ্ন। অতীতের তুলনায় বর্তমানে নারীরা যথেষ্ট সুযোগ - সুবিধা পাচ্ছে। তারা এই সুযোগের সঠিক মূল্যায়ণ করতে পারছে ?

মনসুরুল  : নারীরা মূল্যায়ন করতে পেরেছে কিনা তাদের সুযোগ সুবিধা এটা খুবই ট্রিকি একটা প্রশ্ন। রূপক দিয়ে বললে এটা একটা বাস জার্নির মতো, আমি যেটা দেখেছি একসময় নারীরা বাসে চড়তে নিরুৎসাহিত হতো।  তারপর বাসে সংরক্ষিত আসন রাখা হলো। সেখানে মেয়েরা বসতে লাগলো, তার কিছুদিন পর মেয়েরা অন্য সিটে বা দাঁড়িয়ে বাসে যাতায়াত করতে শুরু করলো৷ এই জার্নিটা একটা স্লো প্রসেসের মতো৷

মেয়েরা সুযোগ মূল্যায়ন করতে পারছে কিনা সেটা আমার পক্ষে তো কমেন্ট করা সম্ভব না। আমি যেটা বিশ্বাস করি যে এটা ইমপ্রুভ করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে যেটা জরুরি যে একজন আরেকজনকে রেস্পেক্ট করতে হবে। আপনি যেখানেই আছেন, আপনি পুরুষ হোন মহিলা হোন, একজনের প্রতি আরেকজনের যে সম্মান এটা যতটা তৈরি হবে তত সহজ হবে সকলকিছু। 

আরো পড়ুন : যদি ব্যর্থ হই?

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment